পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল ৫০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর দাবি

বিশেষ প্রতিবেদক
পটুয়াখালী সদর হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবি এখন সময়ের অনিবার্য প্রয়োজন হিসেবে উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা অবকাঠামোগত দুর্বলতা, চিকিৎসক সংকট, জরুরি বিভাগে অব্যবস্থাপনা এবং চেম্বার ও যন্ত্রপাতির অভাব—সব মিলিয়ে এ হাসপাতাল এখন চাপ সইতে না পারা এক ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ, চিকিৎসকের অবহেলায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(পবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা এই দাবিকে আরও জোরালো করেছে।
গতকাল, ১৩ এপ্রিল (শনিবার), কৃষি অনুষদের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আশিক (২০) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন একটি পুকুরে পড়ে পানিতে ডুবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহপাঠীরা তাকে দ্রুত পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট ধরে তিনি জরুরি বিভাগে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন এবং দোষী চিকিৎসকদের বিচারের দাবি জানান।
বর্তমানে পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১২০০ রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। বিশেষ করে শিশু, গাইনী, সার্জারি ও মেডিসিন বিভাগে রোগীর চাপ ভয়াবহ। শয্যার অভাবে অনেককে মেঝেতে রাখা হয়, আবার পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় সময়মতো চিকিৎসাও মিলছে না।
হাসপাতালের ওয়ার্ড, চেম্বার ও যন্ত্রপাতির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত চেম্বারগুলোর অধিকাংশই আধুনিক চিকিৎসা পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নয়। এ ছাড়া, ডাক্তারদের একটি বড় অংশ বেসরকারি চেম্বারে বেশি সময় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রোগীর স্বজন বলেন, “হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়ার চেয়ে বেসরকারি চেম্বারে পাওয়া সহজ। কিন্তু সবার তো টাকা দিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই।”
এই পরিস্থিতির উত্তরণে নাগরিক সমাজ, শিক্ষার্থী ও জেলার সাধারণ জনগণের দাবি—পটুয়াখালী সদর হাসপাতালকে দ্রুত ৫০০ শয্যায় উন্নীত করতে হবে এবং চিকিৎসকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
পটুয়াখালী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন নাহিয়ান বলেন,“ আশিকের মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর। সদর হাসপাতালের বর্তমান অবকাঠামো, ডাক্তারদের সংকট, জরুরি বিভাগে গাফিলতি—সব মিলে এটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই না আর কোনো মা তার সন্তানকে হারাক, কোনো শিক্ষার্থী এমনভাবে প্রাণ হারাক। তাই আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি—পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে ৫০০ শয্যার আধুনিক, পূর্ণাঙ্গ ও জনবান্ধব অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। এটি শুধু উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি মানুষের মৌলিক অধিকার। আমরা এই দাবিতে সবাইকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পটুয়াখালী জেলা সমন্বয়ক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “আশিক ভাইয়ের মৃত্যু একটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা নয়। প্রতিনিয়তই আমরা দেখছি কীভাবে চিকিৎসা সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে কারণ আমরা ন্যূনতম নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা চাই। পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের উন্নয়ন, চিকিৎসকদের জবাবদিহিতা এবং জরুরি চিকিৎসার মানোন্নয়ন—এই তিনটি দাবি পূরণ না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।”
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া জানান, “শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তাধীন। কারো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, হাসপাতালের উন্নয়ন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে।”
পটুয়াখালী সদর হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ শুধু একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়—এটি এই অঞ্চলের মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষার দাবির প্রতীক। আশিকের মতো আর কাউকে যেন অবহেলার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে না হয়, সেজন্য প্রয়োজন এখনই শক্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ।
Unauthorized use of news, image, information, etc published by দৈনিক আমাদের পটুয়াখালী is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.