শেখ হাসিনাকে তলব করেছে দুদক

৮ মে ২০২৫, ২:২৬:২৫

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দেশের তিনটি বিমানবন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির পাঠানো এক নোটিসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে হবে।

একই অভিযোগে সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও সাবেক সচিব মোকাম্মেল হোসেনকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

জানা গেছে, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে থেকে শেখ হাসিনার ঢাকার বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদন ও গোপালগঞ্জের ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদকের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে মুখোমুখি না হলে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারাবেন।

দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক সিনিয়র সচিব মুহিবুল হক, সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনের সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান ও অ্যারোনাস ইন্টারন্যাশনালের মালিক লুৎফুল্লাহ মাজেদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশ করে প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের নামে হাজার-হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই আপনাকে ৮ মে বৃহস্পতিবার সাড়ে সকাল ১০টায় দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ করা হলো। নির্ধারিত সময়ে আপনি উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে এ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে।’

চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি দেশের তিনটি বিমানবন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলা করে দুদক।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগাযোগ, নেভিগেশন ও নজরদারি ব্যবস্থাপনা, রাডার স্থাপন প্রকল্পের আওতায় রাডার নির্মাণ কাজের প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ঢাকার বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ (তৃতীয় টার্মিনাল) প্রকল্পের ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যারোনাস ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধারের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের ২১২ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ ও রানওয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মামলাগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মুহিবুল হক ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম মফিদুর রহমান, বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আনাম, পরিচালক লুৎফুল্লাহ মাজেদ, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আফরোজা নাসরিন সুলতানা, সাবেক পিডি পরিচালক একেএম মনজুর আহমেদ, থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের পিডি একেএম মাকসুদুল ইসলাম ও সুবেন্দু বিকাশ গোস্বামী, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পিডি মইদুর রহমান মো. মওদুদ, সাবেক পিডি উপসচিব শাহ জুলফিকার হায়দার, সাবেক পিডি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আনিসুর রহমান, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক পিডি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিনুল হাসিব, সাবেক পিডি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম এবং সাবেক পিডি মো. ইউনুছ ভূঁইয়াসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠায় দুদক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও বেশিরভাগ নেতা আত্মগোপনে।

এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে গণহত্যা বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে কূটনৈতিকপত্র দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া চলতি বছর ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের এক ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বৈঠকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান।

Unauthorized use of news, image, information, etc published by দৈনিক আমাদের পটুয়াখালী is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.