কালাইয়া রব্বানিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্ত দাবি শিক্ষক মহলের

৬ মে ২০২৫, ৭:৪৩:২৮

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কালাইয়া রব্বানিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলহাজ্ব এ এস এম আবদুল হাই-এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, পেশাগত অসদাচরণ ও নানাবিধ অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অভিযোগ জমে উঠলেও, সম্প্রতি শিক্ষকদের একাংশ বিষয়টি প্রকাশ্যে আনায় তা নতুন মাত্রা পেয়েছে।অভিযোগকারীদের ভাষ্যমতে, ১৯৯৯ সালে অধ্যক্ষ পদে যোগদানের পর থেকে আলহাজ্ব আবদুল হাই একক কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়া এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার অনুগতদের মনোনয়ন দিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন করেছেন, যাতে তার কর্মকাণ্ডে কেউ প্রশ্ন না তোলে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, কামিল মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর বিভিন্ন খাত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে থাকে। তবে এসব অর্থের স্বচ্ছ হিসাব পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালের বার্ষিক পরীক্ষার শেষে পরীক্ষার ফি বাবদ মোট ৬৪২,৭৩০ টাকা স্কেলের ২০% হারে বিতরণ দেখানো হয়। কিন্তু শিক্ষকরা দাবি করেন, তাদের দেয়া হয়েছে মাত্র ১১২,০৯০ টাকা। এছাড়াও, প্রকৃত অর্থ প্রদানের চেয়ে ভাউচারে অতিরঞ্জিত পরিমাণ দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষিকা  জানিয়েছেন তাকে ৩,২০০ টাকা দেয়া হলেও ভাউচারে দেখানো হয়েছে ২৩,২০০ টাকা।  একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন শিক্ষক।

শিক্ষকদের অভিযোগ আরও রয়েছে, সরকারি বরাদ্দকৃত টিউশন ফি বছরে দুইবার আসলেও তার কোনো স্বচ্ছতা নেই। শিক্ষকরা এর কোনো অংশ পাননি এবং মাদ্রাসায় দৃশ্যমান উন্নয়নও চোখে পড়ে না।
এছাড়া নুরানি বিভাগের ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই বলে দাবি করা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ এবং অধ্যক্ষ মহোদয় মিলে এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। অধ্যক্ষের দাবির বিপরীতে তারা বলেন, কামিল মান অনুমোদনের জন্য লক্ষ টাকা ব্যয়ের দাবি ভিত্তিহীন, কারণ এটি স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছিল।
শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন সময় নতুন বেতনক্রম, টাইম স্কেল, বি.এড স্কেল ও এমপিও শিট সংশোধনের জন্য জোর করে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়েছে। এমনকি প্রাথমিক শ্রেণির বই বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও তুলেছেন তারা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর শিক্ষকবৃন্দের এক বিশেষ সভায় অধ্যক্ষ তার ‘ভুল স্বীকার’ করে কিছু প্রতিশ্রুতি দেন, যার লিখিত দলিলে শিক্ষকদের স্বাক্ষর রয়েছে। অভিযোগকারী শিক্ষকরা এই বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আলহাজ্ব এ এস এম আবদুল হাই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

এদিকে অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছেন স্থানীয় অভিভাবক এবং সচেতন মহল।

Unauthorized use of news, image, information, etc published by দৈনিক আমাদের পটুয়াখালী is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.