For Advertisement
সৌন্দর্যের মাঝে শ্যাওলার ছায়া, কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকের হোঁচট

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত কুয়াকাটা। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে অবস্থিত এই সৈকত পর্যটকদের জন্য এক অভূতপূর্ব আকর্ষণ—যেখানে একসঙ্গে দেখা মেলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপার মোহনীয় দৃশ্য। কিন্তু সেই সৌন্দর্যের মাঝে এবার যেন ছায়া ফেলেছে জিও ব্যাগে জমে থাকা শ্যাওলা ও বালুচ্যুতি।
সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে কিছুদিন আগে স্থাপন করা হয়েছিল জিও ব্যাগ। কিন্তু বালু সরে গিয়ে সেসব ব্যাগ এখন পড়ে আছে এলোমেলোভাবে, গর্ত ও পিচ্ছিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অন্তত অর্ধশতাধিক পর্যটক আহত হয়েছেন এসব কারণে।
দুর্ঘটনার ফাঁদে সৌন্দর্য অনুসন্ধান:
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। সূর্যোদয়ের সময় যখন সোনালি আলো পানিতে ঝিলমিল করে, মনে হয় যেন কোনো ছবির জগতে চলে এসেছি। কিন্তু সৈকতের বর্তমান অবস্থা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। যেখানে প্রকৃতি আরাম দেওয়ার কথা, সেখানে হঠাৎ পড়ে গিয়ে আহত হতে হয়—এটা খুবই দুঃখজনক। যে জায়গায় একটু হাঁটতেই ভয় লাগে, সেখানে আরাম করে ঘোরাফেরা করা কল্পনার বিষয়। জিও ব্যাগে শ্যাওলা জমে গেছে, আর একটু অসতর্ক হলেই পিছলে পড়ে যাওয়া অনিবার্য।’
সৈকতে নেমে গর্তে পড়ে যাওয়া এখন নিত্যদৃশ্য:
চট্টগ্রাম থেকে আগত আরেক পর্যটক আনোয়ারা বেগম জানান, ‘আমরা পরিবার নিয়ে এসেছিলাম কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু গোসল করতে গিয়ে আমার ছোট ছেলে হঠাৎই পড়ে যায় এক গর্তে। পরে বুঝলাম, ছেঁড়া জিও ব্যাগ থেকে বালু সরে গিয়ে ওই গর্ত তৈরি হয়েছে। জোয়ারের সময় এগুলো পানির নিচে ঢাকা পড়ে যায়, তাই আগেভাগে বুঝে ওঠা যায় না। এমন বিপজ্জনক অবস্থায় গোসল কিংবা হাঁটা—দুটোই রীতিমতো রিস্ক নিয়ে করতে হচ্ছে।’
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও দাবির ভাষ্য:
পর্যটন ব্যবসায়ী ও ‘বীচ ট্যুরিজম’-এর স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘কুয়াকাটা কেবল আমাদের জীবিকার উৎস নয়, আমাদের অহংকার। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসে এখানে, কিন্তু সৈকতের যেসব জায়গায় জিও ব্যাগ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে, তা এখন বিপদের কারণ। কিছু অংশ আগে সরানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনো অনেক জায়গায় এই ব্যাগগুলো পড়ে আছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই জায়গার সুনাম ক্ষুণ্ন হবে, আর পর্যটকরাও আসতে নিরুৎসাহিত হবেন।’
প্রশাসনের আশ্বাস:
এ ব্যাপারে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুরনো জিও ব্যাগ ও স্থাপনা অপসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি একটি টেকসই সমাধান নিয়েও ভাবা হচ্ছে।’
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, বারবার পুনরাবৃত্তি:
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটনসংশ্লিষ্টদের মতে, সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা বেশিরভাগই সাময়িক। টেকসই ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার অভাবে প্রতিবছরই একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ফলে শুধু সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, আশপাশের স্থাপনাও হুমকির মুখে পড়ছে।
এভাবে বছরের পর বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অব্যবস্থাপনার কারণে কুয়াকাটা তার মোহনীয় রূপ হারাতে বসেছে। আর পর্যটকরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দেশের একসময়ের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থান থেকে—যেন এক ব্যাগ বালুর ভারেই হারিয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার সৌন্দর্য।
##
সিকদার জাবির হোসেন, পটুয়াখালী
For Advertisement
Unauthorized use of news, image, information, etc published by দৈনিক আমাদের পটুয়াখালী is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.
Comments: