কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন? এই ৫টি প্রাকৃতিক পানীয়েই মিলবে দ্রুত আরাম!

সকালে ঘুম ভাঙার পর অনেকের দিন শুরু হয় সহজেই শরীর হালকা করে। কিন্তু কারও কারও জন্য এই সময়টি হয়ে ওঠে কষ্টকর—প্রয়োজনে নানা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া বা পার্কে দীর্ঘ হাঁটায়ও যায় অনেকেই। অথচ প্রতিদিন কিছু প্রাকৃতিক পানীয় পান করলে হজমপ্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং স্বাভাবিক মলত্যাগে সহায়তা করে। চিকিৎসক ও গবেষকেরা বলছেন, নিয়মিত কিছু পানীয় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দ্রুত কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিচে এমনই পাঁচটি প্রাকৃতিক পানীয়ের কথা তুলে ধরা হলো।
অ্যালোভেরা গাছের পাতার ভেতরের পাল্প থেকে তৈরি এই জুসে রয়েছে পলিস্যাকারাইড, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন, এনজাইমসহ নানা পুষ্টি উপাদান। বিশেষ করে এতে থাকা অ্যালোইন, আলেম্যানিন ও এমোডিন নামের যৌগগুলো মল নরম করে সহজে বের হতে সাহায্য করে। Annals of Geriatric Education and Medical Sciences–এ ২০২৪ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্কদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অ্যালোভেরা জুস অত্যন্ত কার্যকর। তবে বাজারজাত জুসের সব পণ্য এই উপকার দেয় না, তাই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যালোভেরা জুসই সবচেয়ে উপকারী।
যথেষ্ট পানি পান হজমে সহায়ক হলেও তাতে যদি সামান্য গুড় মেশানো যায়, তাহলে এর কার্যকারিতা আরও বাড়ে। গুড় হচ্ছে অপরিশোধিত প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা প্রাচীনকাল থেকেই দেহের বিষাক্ত উপাদান দূর করতে এবং মলত্যাগ সহজ করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। eFood জার্নালে ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক পর্যালোচনায় বলা হয়, গুড় শরীরকে ডিটক্সিফাই করে এবং অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
সকালে এক কাপ গরম কফি শুধু মন ভালোই করে না, এটি পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন গ্যাস্ট্রোকলিক রিফ্লেক্স সক্রিয় করে, যা মলকে কোলন হয়ে বাইরে যাওয়ার গতি বাড়ায়। BMC Public Health–এ ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ক্যাফেইন গ্রহণ কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
ভারতীয় উদ্ভিদ Plantago Ovata–এর বীজ থেকে পাওয়া ইসবগুলের ভুষি প্রাকৃতিক খাদ্যআঁশের অন্যতম উৎস। এটি অন্ত্রের ভেতরে পানি ধরে রাখে, ফলে মল নরম হয় এবং বের হতে সহজ হয়। International Journal of Molecular Sciences–এ ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইসবগুলের ভুষি নিয়মিত খেলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়, যা কোলনের গতি ও মলের পানির পরিমাণ বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
ফলের রসও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। প্রুন জুসে থাকে পেকটিন, এক ধরনের দ্রবণীয় আঁশ, যা মল নরম করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ‘সর্বিটল’ নামের প্রাকৃতিক চিনি পানি টেনে আনে কোলনে, ফলে সহজে মলত্যাগ হয়। American Journal of Gastroenterology–এ ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেকটিন ও সর্বিটলসমৃদ্ধ প্রুন জুস খেলে শক্ত ও দলা মলের সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দ্রুত উপশম হয়।
হজম ভালো রাখতে আঁশসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেমন জরুরি, তেমনি পানীয় আরও দ্রুত কাজ করে। কারণ শরীর খাবারের আঁশ ভাঙতে সময় নেয়, কিন্তু তরল সহজে হজমনালিতে প্রবাহিত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দ্রুত উপশমে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক এই পানীয়গুলো নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে রাখলে হজমের উন্নতি, শরীরের ডিটক্সিফিকেশন ও স্বাভাবিক মলত্যাগ নিশ্চিত করা সম্ভব। ওষুধের পরিবর্তে প্রকৃতির এই সহজ উপাদানগুলোই হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সেরা সহচর।




আপনার মন্তব্য লিখুন