আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না যারা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-এ দায়ের করা মামলায় যাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তারা আর আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। পাশাপাশি তারা সরকারি কোনো পদেও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
গত সোমবার (৬ অক্টোবর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এ সংশোধনের মাধ্যমে এই বিধান কার্যকর করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন একটি অধ্যাদেশ জারি করে আইনে নতুন ২০(গ) ধারা সংযোজন করেছেন, যা অধ্যাদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়েছে।
নতুন ধারার বিধান অনুযায়ী, আইনের ৯(১) ধারার অধীনে যাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে, তারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া, সরকারি দায়িত্ব পালন বা স্থানীয় সরকার পর্যায়ে কোনো পদে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে গণ্য হবেন। অর্থাৎ তারা চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনার বা প্রশাসক হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে বা নিয়োগ পেতে পারবেন না। পাশাপাশি প্রজাতন্ত্রের কোনো সরকারি চাকরিতেও তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
তবে পরবর্তীতে যদি কেউ ট্রাইব্যুনাল থেকে খালাস পান বা অব্যাহতি প্রাপ্ত হন, তাহলে তার ওপর থেকে এই অযোগ্যতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠে যাবে।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাবেক কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাদরুদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী এবং কুষ্টিয়া সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা।
এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক রংপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. মুনিরুজ্জামান এবং সাবেক ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “দেশ এখন এক বিপ্লবোত্তর পুনর্গঠনের পর্যায়ে রয়েছে, তাই সময়ের দাবি অনুযায়ী এই সংশোধন আনা হয়েছে।”
গত ৪ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা পরিষদে সংশোধিত খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আইসিটি আইনে অভিযুক্তদের সাধারণ অপরাধীর মতো দেখা যায় না; তারা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত। সংবিধানের ৪৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের কিছু মৌলিক অধিকার আগেই সীমিত করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আইনটি যুক্তিযুক্ত।”
তবে সংশোধনটি নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, “এই বিধান ন্যায়বিচারের অন্যতম মূল নীতির পরিপন্থী। কারণ কোনো ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ ধরা হয়। শুধুমাত্র অভিযোগ গঠনের ভিত্তিতে প্রার্থী হওয়া বা চাকরির সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া বিচার ছাড়াই শাস্তি দেওয়ার মতো।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “ধরা যাক, আমি চাইলে নির্বাচনের আগে আপনার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করতে পারি। তখন আদালতের রায় আসার আগেই আপনাকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হবে। এতে আপনার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগই থাকবে না। এটা কি ন্যায়বিচার?”
জুলাই বিদ্রোহ-পরবর্তী সময়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি মামলায় ৬৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল বা গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন