দেশে নতুন আতঙ্ক অ্যানথ্রাক্স, এই সংক্রমণ কিভাবে ছড়ায়?

বাংলাদেশে আবারও ছড়িয়ে পড়ছে গবাদি পশুর মাধ্যমে সংক্রমিত মারাত্মক রোগ *অন্থ্রাক্স। এ রোগ পশুর পাশাপাশি মানুষের শরীরেও সংক্রমণ ঘটিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এরই মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় রোগটি শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে রংপুরের পীরগাছা উপজেলাতে নতুনভাবে অন্থ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি সেখানে সন্দেহভাজন ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮ জনের শরীরে অন্থ্রাক্সের জীবাণু* শনাক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ফ্রিজে সংরক্ষিত মাংসেও অন্থ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে।

রংপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে চারটি ইউনিয়নে অন্তত ৫০ জন আক্রান্ত হন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে তিন শতাধিক গবাদি পশু মারা গেছে, এবং অসুস্থ পশু জবাই করে মাংস নাড়াচাড়া করার কারণে একটি পরিবারের চারজনসহ প্রায় ১০ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর তথ্যমতে, অন্থ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট এক সংক্রমণ। এটি মূলত গবাদি পশু যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি থেকে মানুষের শরীরে ছড়ায়। তবে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ খুবই বিরল।

মানুষের মধ্যে অন্থ্রাক্সের তিনটি প্রধান ধরণ দেখা যায়—

- বিজ্ঞাপন -

1. ত্বকজনিত (Cutaneous Anthrax):
এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণ। কোনো ক্ষত বা কাটা জায়গা দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করলে ছোট ফোটা বা চুলকানি দেখা দেয়, পরে সেখানে কালো কেন্দ্রযুক্ত ঘা তৈরি হয়।

2. পাকস্থলিজনিত (Gastrointestinal Anthrax):
আক্রান্ত পশুর অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। এতে বমি, জ্বর, পেট ব্যথা ও রক্তমিশ্রিত ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

3. শ্বাসজনিত (Inhalation Anthrax):
এটি সবচেয়ে *ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী* ধরণ। বাতাসে ভাসমান স্পোর শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট, উচ্চ জ্বর, শক এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ইউরোপে নেশাজাতীয় পদার্থ ইনজেকশন দেওয়ার মাধ্যমে *Injection Anthrax*-এর ঘটনাও দেখা গেছে।

### 🔹 চিকিৎসা ও সতর্কতা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্থ্রাক্সের প্রাথমিক উপসর্গ অনেক সময় সাধারণ চর্মরোগ বা সর্দি–জ্বরের মতো মনে হতে পারে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে অধিকাংশ সংক্রমণ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব।

রোগের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে—

* অসুস্থ বা মৃত গবাদি পশু জবাই করা যাবে না।
* সংক্রমিত এলাকায় পশু জবাই ও মাংস বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে।
* মাংস ও পশুর চামড়া ব্যবহারের আগে ভালোভাবে সিদ্ধ বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
* পশু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত টিকা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে।

দেশের উত্তরাঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া অন্থ্রাক্স এখন জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণই পারে এ প্রাণঘাতী রোগ থেকে জনগণকে নিরাপদ রাখতে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

- Google -

আরও পড়ুন

Back to top button