কলেজছাত্রী ও বাবাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগ! রাঙ্গাবালীতে দুই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে এক কলেজছাত্রী ও তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর দাবি, তাঁকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতা ও তাঁর সহযোগীরা লোহার রড দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি তাঁর শরীর থেকে কাপড় খুলে নেয়। বর্তমানে আহত ডায়না আক্তার (২৩) ও তাঁর বাবা রহিম খাঁ (৭০) গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার দুপুরে ইউনিয়নের স্লুইজ বাজার এলাকায়। ডায়না গলাচিপা ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির নেতা রেজাউল মাতব্বরের ছেলে সায়মুন মাতব্বর (২৩) তাঁকে নানা ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেন। প্রতিবাদ করলে সায়মুন লোহার রড দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। এসময় এগিয়ে এলে তাঁর বাবাকেও মারধর করা হয়। পরে সায়মুনের সঙ্গে যোগ দেন তাঁর চাচাতো ভাই চরমোন্তাজ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি তারিকুল ইসলাম মিঠুন।
ডায়নার দাবি, হামলার সময় সায়মুন ও মিঠুন তাঁর ওড়না এবং বাবার লুঙ্গি টেনে খুলে নেয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে মারধরের কারণে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়। এতে তিনি একটি চোখ দিয়েও দেখতে পাচ্ছেন না। এর আগেও সায়মুন তাঁর সঙ্গে জবরদস্তিমূলক আচরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে চরমোন্তাজ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল মুন্সি বলেন, “তরুণীর গায়ে হাত দিয়ে বড় ধরনের অপরাধ হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
এদিকে ঘটনার পর সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত দুই নেতা—চরমোন্তাজ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি তারিকুল ইসলাম মিঠু এবং ছাত্রদল নেতা সায়মুন ইসলামকে বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রদল। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশিদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তারিকুল ইসলাম মিঠুকে সাংগঠনিক পদ থেকে এবং মো. সায়মুন ইসলামকে দলীয় প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তুষার আহম্মেদ বলেন, “ডায়নার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে পুলিশি অনুমতি ছাড়া বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।”
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা তারিকুল ইসলাম মিঠুন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ডায়না আমার চাচিকে গালাগাল করেছিল। তাই চুপ থাকতে পারিনি। তবে ওই মেয়ে ও তাঁর বাবা আমার চাচাতো ভাই সায়মুনকে আঘাত করেছে। সায়মুন এখন হাসপাতালে ভর্তি।”
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হাওলাদার বলেন, ঘটনাটি শোনার পর ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন