বিএনপি করার শর্তে গ্রেফতার আ.লীগ নেতাকে থানা থেকে ছেড়ে দিলেন ওসি

বিএনপি নেতাদের সুপারিশে ও জিম্মায় বিএনপি করার শর্তে গ্রেফতার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকে থানা থেকে ছেড়ে দিলেন ওসি। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে পটুয়াখালীর বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগ নেতাকে  ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় ওসি ও এসপির বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন দেশের বাইরে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনও।

- বিজ্ঞাপন -

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে অপারেশন ডেভি্ল হান্ট অভিযানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন কালাইয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মেহেদী হাসান শাকিল।  ওইদিন রাতেই তাকে ছাড়িয়ে নিতে বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মীরা থানায় জড়ো হন এবং তদবির শুরু করেন। একপর্যায়ে ওসি কামাল হোসেন শাকিলকে মুচলেকা নিয়ে ভবিষ্যতে বিএনপি করার শর্তে ছেড়ে দেন।

মুচলেকা পত্রে লেখা হয়, ‘আমি মো: মেহেদী হাসান শাকিল, পিতা: মৃত বাবুল হাওলাদার, এই মর্মে মুচলেকা প্রদান করছি যে, গত ১৭/০২/২০২৫খ্রি: রাতে স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্তির পর আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনের যুবলীগের কর্মী হিসেবে অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে প্রাথমিকভাবে বাউফল থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে আলোচনা করে তারা সকলে আমাকে বিএনপিএর কর্মী হিসেবে চিনে মর্মে সত্যায়ন করে এবং স্থানীয় ও উপজেলা বিএনপির নেতা কর্মীগনের সুপারিশ এর প্রেক্ষিতে আমি থানা হতে মুক্ত হতে ইচছুক। আমি ভবিষ্যতে বিএনপির দলের প্রতি অনুগত থেকে সকল প্রকার কার্যক্রম পরিচালনা করিব মর্মে অংগীকার করছি। এছাড়া অসত্য তথ্যের ভিত্তিকে আটক করার ব্যাপারে থানা পুলিশের প্রতি আমার কোন ক্ষোভ বা অভিযোগ নাই। আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল বিধায় আমি সকল প্রকার রাগ অনুরাগ ভুলে গিয়ে আমি আমার কাজে মনোনিবেশ হব। ভবিষ্যতে আমার প্রতি কোন প্রকার অভিযোগ পাওয়া গেলে আমার বিরুদ্ধে যে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমার কোন আপত্তি থাকবেনা।’

এদিকে এ ঘটনায় বাউফল থানার ওসি ও পটুয়াখালী পুলিশ সুপারকে নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের পোস্ট নিয়ে তোলপাড় চলছে। মঙ্গলবার রাতে ইলিয়াস হোসেন তার ভেড়িফায়েড ফেসবুকের পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘পটুয়াখালীর বাউফল থানার ওসি ২লাখ ও এসপি ৫লাখ টাকার বিনিময় কালাইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হত্যা চেষ্টা মামলা আসামী শাকিলকে গ্রেফতারের ১০ ঘন্টা পর ছেড়ে দেয়া হলো। ওসি কামাল হোসেন গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী  এবং তার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পোস্টে ওসির ও সাকিলের ছবি যুক্ত করে দেয়া হয়।
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন এই পোস্ট দেয়ার পর তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয় তোলপাড়। নেটিজেনরা নানা ধরণের কমেন্ট করেন। একজন  কমেন্ট করেন ওসি ঘুষ খাননা, হাদিয়া খান। অপর একজন  কমেন্ট করেন, বাউফলে প্রশাসনিক শক্তির উন্নতি কার দরকার, কোথাও জানি একটা মার পেচ রয়ে গেছে।

এব্যাপারে কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুচলেকায় স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষরকারী এ.কে.এম মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমার জানামতে শাকিল আওয়ামী লীগের কোন পদে নেই। বিএনপিরও কোন পদেও নেই। তবে তার পরিবারের লোকজন বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমি মূলত অন্য একটি কাজে থানায় গিয়েছিলাম। তখন স্বাক্ষী হিসেবে আমাকেও রেখেছে।

- বিজ্ঞাপন -

বাউফল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও মুচলেকায় স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষরকারী জি.এম নিউটন বলেন, ‘পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এক পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে শাকিলকে থানায় নেয়া হয়। পরে বিষয়টি সমাধান হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশকে কোন টাকা দেয়া হয়নি। শাকিল আওয়ামী লীগের কোন পদে নেই। তবে আওয়ামী লীগের আমলে মিছিল মিটিংয়ে এরকম অনেকেই গেছে, সাংবাদিক ও পুলিশও আওয়ামী লীগের সাথে মিশছে। তবে শাকিলের পরিবারের লোকজন বিএনপির রাজনীতি করে।’

এব্যাপারে জানতে চাইলে বাউফল থানার ইনচার্জ কামাল হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানে তাকে ধরে আনা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি নেতারা থানায় এসে জানান শাকিল আওয়ামী লীগ করেনা। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

- Google -

আরও পড়ুন

Back to top button