দিন-রাতে নির্বিচারে গাছ কেটে উজাড় হচ্ছে গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা চর গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বনখেকো চক্র। সংঘবদ্ধভাবে দিন-রাত নির্বিচারে বড় বড় গাছ কেটে পাচার করছে তারা। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এতে বনভূমি উজাড় হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে কেটে ফেলা গাছের গুঁড়ি ও ডালপালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংঘবদ্ধ একটি চক্র কখনো দিনের আলোয়, কখনো রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সবুর মিয়া বলেন, “যখন যার প্রয়োজন হয় তখনই গাছ কেটে নেয়। কেউ সমুদ্রের স্রোতে ভেসে আসা গাছ কেটে বিক্রি করছে, আবার কেউ বনের ভেতরে ঢুকে বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”
উপকূল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন (উপরা) ১নং আহ্বায়ক আবুল হোসেন রাজু বলেন, “গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন ধ্বংস হলে শুধু গাছই নয়, উপকূলের প্রাকৃতিক ঢালও ভেঙে পড়বে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় এই বনই ঢেউয়ের আঘাত ঠেকায়। বন রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা জরুরি। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে উপকূল ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, চর গঙ্গামতির বন উজাড় হলে উপকূল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। গাছের শেকড় শুধু ভূমি রক্ষা করে না, বরং জলোচ্ছ্বাসের সময় প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার কাজ করে। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে উপকূলীয় ভাঙন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বহুগুণে বাড়বে।
গঙ্গামতি বিট কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “ঝড়ে ভেঙে পড়া বা শুকিয়ে যাওয়া গাছ স্থানীয়রা মাঝে মাঝে কেটে নেয়। তবে অবৈধভাবে গাছ কাটার ঘটনায় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে কিছু কাঠ জব্দ করা হয়েছে, তবে বাধা দিলে অভিযুক্তরা হুমকি দেয়।”
মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম মনিরুজ্জামান বলেন, “গাছ পাচারকারীদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাঠ জব্দ করা হয়েছে এবং মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।”
আপনার মন্তব্য লিখুন