জুলাই অ’ভ্যূ’ত্থানে অংশ না নিয়েও শহীদের তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত! পটুয়াখালীতে অনুদানের টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে সামনে আসে ভুয়া শহীদের তথ্য!

অনুদানের টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে সামনে আসে ভুয়া শহীদের তথ্য!
জুলাইয়ের গণ-অভ্যূত্থানে অংশ না নিয়ে বশির সরদার(৪০) নামে এক মৃত ব্যক্তির নাম শহীদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে সরকার থেকে পাওয়া অনুদানের টাকার ভাগ নিয়ে পরিবারে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে সামনে আসে মুল ঘটনা। ভাগের অংশ থেকে বঞ্চিত হয়ে নিহত বশিরের বড় ভাই নাসির সরদার গত ২২ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগে বশিরের সরদারের মারা যাওয়ার প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন তিনি। নিহত বশির সরদার বদরপুর ইউনিয়নের খলিশাখালি গ্রামের সেকান্দার সরদারের ছোট ছেলে। তিনি জেলা শহরের পৌর নিউমার্কেট এলাকায় চায়ের দোকান করতেন।
অভিযোগের পর পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন শহীদের তালিকা থেকে নিহত বশিরের নাম বাতিল ও সরকার থেকে দেয়া সঞ্চয় পত্র স্থগিতের সুপারিশ করে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে ডিসি উল্লেখ করেন,২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রথম দিকে পায়ে লোহা বিদ্ধ হয়ে বশির সরদার আহত হন। এরপর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান। কিন্তু বশির সরদারের পরিবার অনুদান পেতে গত বছরের ৩ আগষ্ট গণ অভ্যূত্থানে আহত দেখিয়ে ঢাকায় চিকিৎসা নেন। এরপর শহীদের তালিকার তাঁর নাম অর্ন্তভুক্ত করানো হয়।
পটুয়াখালী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ছাত্র প্রতিনিধি সজিবুল ইসলাম সালমান বলেন,‘গত বছরের ৩ জুলাই পায়ে লোহা ঢুকে আহত হন বশির সরদার। এরপর তাঁকে ঢাকায় চিকিৎসা করানোর সময় জুলাই আন্দোলনে অংশ গ্রহনের তথ্য লিপিবদ্ধ করার পরিবার। পরে জেলা প্রশাসন থেকে দুই লাখ এবং সরকার থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হয় ওই পরিবারকে। পরবর্তীতে এই অনুদানের অংশ নিয়ে পরিবারে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ওই দ্বন্দ্বে জেরে গত ২২ জুলাই বশিরের বড় ভাই নাসির সরদার মুল ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন’। এরপর ২৩ জুলাই জেলা প্রশাসক একটি সভার মাধ্যমে নিহত বশিরের নাম শহীদের তালিকা থেকে বাতিল চেয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠান’।
নিহত বশিরের স্ত্রী রেবা আক্তার বলেন,‘গত বছরের ৩ জুলাই জেলা শহরের চৌরাস্তা থেকে বাসায় ফেরার পথে পায়ে লোহা ঢুকে তাঁর স্বামী মারাত্মক ভাবে আহত হন। এতে পায়ে পচন ধরে গেলে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় তাঁকে। স্বামীর চিকিৎসা করাতে অনেক ধারদেনা ও ঋণ করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ওই বছরের ১৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে বাড়ি নিয়ে আসার পথে তার স্বামী মারা যান’।
বশিরের স্ত্রী আরও বলেন,‘স্বামী মারা যাওয়ার পরে দুই সন্তানের ভরনপোষন নিয়ে তিনি একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েন। পরে বশিরের বড় ভাই নাসির সরদার প্ররোচনায় সরকারি অনুদান পেতে ভুল তথ্য দিয়ে শহীদের তালিকায় তার স্বামীর নাম অর্ন্তভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এক পর্যায় অনুদানের একটি বড় অংশ দাবি করেন বশিরের বাবা-মা ও ভাই। তাঁদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে ডিসির কাছে অভিযোগ করেন’।
নিহত বশিরের বড় ভাই নাসির সরদার জানান,‘তাঁর ছোট ভাই বশির গণ অভ্যূত্থানে অংশ নিয়ে আহত হননি। কিন্তু আহত ঘটনায় তাঁকে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই সরকারি অনুদান পেতে শহীদের তালিকা নাম অর্ন্তভুক্ত করানো হয়। পরবর্তীতে তিনি তাঁর অপরাধ বুঝতে পেরে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন’।
নিহত বশিরের বৃদ্ধ বাবা সেকান্দার সরদার বলেন,‘তাঁর ছোট ছেলে বশির আহত হওয়ার পর চিকিৎসা করাতে তিনি ৫ লাখ খরচ করেন। কিন্তু সরকারের দেয়া অনুদানের ১২ লাখ তাঁর পুত্রবধু (বশিরের স্ত্রী)রেবা আক্তার একাই ভোগ করছেন। যে কারনে তাঁর বড় ছেলে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে ডিসির কাছে অভিযোগ করেন’।
আপনার মন্তব্য লিখুন