পটুয়াখালীর দুমকিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে সুস্থ মানুষের জটিল রোগ!

৬বছরে শিশু কন্যা নাজিফাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান উপজেলা শহরের দুমকি এলাকার দাদি সখিনা বেগম। পরীক্ষা করান উপজেলা শহরের ‘নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস’ সেন্টারে। রিপোর্টে আইএসও শনাক্ত হয় ২০০‘র স্থলে ৬০০। নিশ্চিৎ হওয়ার জন্য বিভাগীয় শহর বরিশালের জাহানারা ক্লিনিকে একই রিপোর্টে আইএসও ২০০শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশকিছু ওষুধ সেবন করানো হলে শিশুটি সুস্থতার পরিবর্তে বিকলঙ্গ হবার আশংকা করেন জাহানারা ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসএম ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন।
উপজেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. জিএম এনামুল হকের স্মরণাপন্ন হয়ে পবিপ্রবির‘র অসুস্থ এক শিক্ষার্থী দি প্যাথলজি সেন্টারের ব্লাড টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী টাইফয়েডের চিকিৎসা দেন। এতে সুস্থতার পরিবর্তে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বরিশালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারো পরীক্ষা করালে আগের রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত হয়। ওই শিক্ষার্থীর শরীরে টাইফয়েডের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ২সপ্তাহ আইসিউতে থেকে ভিন্ন চিকিৎসায় সুস্থ হন। ডা. এনামুল হক নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস‘র কয়েকজন মালিকের অন্যতম একজন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতাসহ রয়েছে সরকারি চাকুরির বাইরে প্রাইভেট হাসপাতাল ব্যবসার অভিযোগ। হাসপাতালের রুগীদের নিজ মালিকানার নিউ লাইফে পাঠানোর অভিযোগ। এ ছাড়া ভুল রিপোর্টের বিষয়ে সিভিল সার্জনের দপ্তরে দেয়া অভিযোগ তুলে নিতে অভিযোগকারিকে হুমকি প্রদান করেছেন। যার একটি অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এদিকে দি প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেয়া এমন ভুল রিপোর্টের মতো উপজেলার বেশকিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার এভাবে ভুল রিপোর্ট দেয় বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের। এতে অতিরিক্ত খরচের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসায় হয়রানি হতে হচ্ছে তাদের। প্রতিকার পেতে নাজিফার দাদি সখিনা বেগম গত ২২/৭/২৫ জুলাই নিউ লাইফ ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট ভুল ছিল না বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। আর কেউ ব্যক্তিগতভাবে ভুল করলে সংগঠন দায় নেবে না বলে জানান নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস‘র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো: আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, টাইফয়েড শনাক্ত হয় এবং সে অনুযায়ী পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এছাড়া অন্য কোনো রোগে শিশুটি এমার্জেন্সিতে যেতে পারে সেটা আমরা বলতে পারবো না।
উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মীর শহিদুল হাসান শাহীন বলেন, অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অদক্ষ কিছু টেকনিশিয়ান রয়েছে, যে কারণে রিপোর্টে তাদের কিছুটা ভুল হয়। উপজেলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মজিবুর রহমান টিটু বলেন, যদি কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগীর পরীক্ষায় কোনো ভুল করে থাকে তাহলে সেগুলোর দায়দায়িত্ব আমরা অ্যাসোসিয়েশন নেব না। সেটার দায় তাদেরকেই বহন করতে হবে। তবে, মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিন দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. খালেদুর রহমান মিয়া। তিনি আরও বলেন, শিগগিরই প্রতিটা ক্লিনিকে ভিজিট করা হবে। যে যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো আপডেট আছে কিনা, মিথ্যা কোনো রিপোর্ট হচ্ছে কি না সেটা আমরা দেখবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো: এজাজুল হক বলেন, চিকিৎসায় বাধাগ্রস্ত ভুল রিপোর্টের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, দুমকি উপজেলা শহর ও লেবুখালীসহ অন্তত: ১৩ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে ২হাজারের অধিক পরীক্ষা করা হয়।
আপনার মন্তব্য লিখুন