অর্থনৈতিক করিডোর হিসাবে পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে: নৌ উপদেষ্টা

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা, রিপোর্টার:- পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আয়োজিত ‘পায়রা বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ভৌগলিক অবস্থান, সরলরৈখিক ও প্রশস্ত চ্যানেল, বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দেশের মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলে একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার লক্ষ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়।”
(২০ জুলাই) রবিবার সকাল ১০টায় কুয়াকাটার সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাস মিলনায়তনে আয়োজিত এই সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে জানানো হয়, বন্দরে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ আধুনিক জেটি, ৩.২৫ লাখ বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ড, ১০ হাজার বর্গমিটার সিএফএস, নিরাপদ নেভিগেশন সুবিধাসহ সরল ও সুপ্রসস্থ চ্যানেল, প্যানামেক্স আকারের জাহাজ চলাচলের উপযোগী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ৩০০০-৩৫০০ টিইইউএস কনটেইনার ধারণক্ষমতার সুবিধা ও ইনার চ্যানেলে একসঙ্গে ১৫টি বাণিজ্যিক জাহাজ ট্রান্সশিপমেন্ট করতে পারবে।
ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে নদীপথে নিরবিচারে সংযোগ, জোয়ারভাটার অপেক্ষা ছাড়াই চলাচলের সুযোগ, আধুনিক কার পার্কিং শেড, স্বল্প ট্যারিফ রেইট (২০-৩০% কম), এবং যানজটমুক্ত পরিবহন সুবিধা বন্দরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। ২০২৬ সালের জুলাই মাসে প্রথম টার্মিনাল চালু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, পায়রা বন্দরে প্রযুক্তিনির্ভর, অটোমেটেড অপারেশন এবং স্মার্ট গ্রাহক সেবার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সামরিক-বেসামরিক সংস্থা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বন্দর ব্যবহারকারীরা, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং নেদারল্যান্ডসের রয়্যাল হাসকোনিং ডিএইচভি প্রতিনিধিরা।
সভার স্বাগত বক্তব্যে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান এবং ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন। বুয়েট টিমের লিড কনসালটেন্ট অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদ প্রকল্পের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রয়্যাল হাসকোনিং ডিএইচভি’র টিম লিডার মেনো মুইজ এবং বন্দরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অগ্রগতি নিয়ে উপস্থাপন করেন সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল কাদের। দ্বিতীয় সেশনে অংশীজনদের পক্ষ থেকে মাস্টারপ্ল্যান ও পায়রা বন্দরের সামগ্রিক অগ্রগতির বিষয়ে মতামত প্রদান করা হয়।
সেমিনারে মাস্টারপ্ল্যানের গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, এটি কেবল অবকাঠামোগত পরিকল্পনা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি একটি উন্নয়ন রূপরেখা। এতে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, পরিবেশগত প্রভাব, ভবিষ্যৎ চাহিদা ও বিনিয়োগ পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা থাকে।
এছাড়াও, মাস্টারপ্ল্যানে বন্দরের বিস্তৃতি, জেটি ও টার্মিনাল, প্রশাসনিক ভবন, ওয়্যারহাউজ নির্মাণসহ ট্রাফিক পূর্বাভাস, চ্যানেলের অবস্থা, সিলটেশন হার ও ড্রেজিং পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, রেলপথ, সড়ক ও টেলিকমিউনিকেশনসহ সব ধরনের ইউটিলিটি সংযোগের পরিকল্পনাও মাস্টারপ্ল্যানে রয়েছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন