পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের মাস্টারপ্ল্যান বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২০ জুলাই) দুপুরে সাগরকন্যা কুয়াকাটার একটি বেসরকারি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মাসুদ ইকবাল।
সেমিনারে জানানো হয়, পায়রা বন্দরের কার্যক্রমকে ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্টে ভাগ করে প্রতিটি বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘কংসারভেন্সি অ্যান্ড পোর্ট ম্যানেজমেন্ট’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যার আওতায় ডেভেলপমেন্ট অফ ইনফ্রাস্ট্রাকচার সাপোর্ট ফ্যাসিলিটিজ (DISF) নামে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ‘পায়রা বন্দরের বিস্তারিত মাস্টারপ্ল্যান’। এই মাস্টারপ্ল্যানে বন্দরের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ, জেটি, টার্মিনাল, কনটেইনার ইয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন, ওয়্যারহাউজ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এছাড়া ট্রাফিক ফোরকাস্টিং স্টাডির মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের পূর্বাভাস, চ্যানেলের বর্তমান অবস্থা, সিলটেশন হার, ড্রেজিং পরিকল্পনা, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, রেল, সড়ক, টেলিকমিউনিকেশনসহ প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি সংযোগের দিকনির্দেশনা মাস্টারপ্ল্যানে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবেশ ও সমাজের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ইআইএ (পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন) এবং এসআইএ (সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন) করে উপযুক্ত প্রতিকারমূলক সুপারিশও প্রদান করা হয়েছে।
সেমিনারে আলোচিত পায়রা বন্দরের উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
আধুনিক সরঞ্জামসহ ৬৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি,
৩,২৫,০০০ বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ড,
১০,০০০ বর্গমিটার আধুনিক কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন (CFS),
সরলরৈখিক ও প্রশস্ত চ্যানেলে নিরাপদ নেভিগেশন,
৪০,০০০-৫০,০০০ মেট্রিক টন কার্গো পরিবহন সক্ষম প্যানামেক্স জাহাজ চলাচলের উপযোগীতা,
জটবিহীন বার্থিং/আনবার্থিং সুবিধা,
অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্ঘটনা মোকাবেলা ব্যবস্থা,
একসঙ্গে ১৫টি জাহাজ ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা,
সময় ও খরচ সাশ্রয়ী ক্লাস-১ নদীপথ সংযোগ,
আধুনিক গাড়ি পার্কিং সুবিধা এবং
গড়ে ২০-৩০ শতাংশ কম ট্যারিফ রেট।
এছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট অপারেশন ও গ্রাহকসেবার মাধ্যমে পায়রা বন্দর দেশের অন্যতম কার্যকর, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে গড়ে উঠছে বলেও বক্তারা জানান।
সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর, সামরিক-বেসামরিক সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিনিধি, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও নেদারল্যান্ডের রয়্যাল হাসকোনিং ডিএইচভি-র প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন