শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা

গাজীপুরের টঙ্গীতে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) থেকে শুরু হচ্ছে। হজের পরে মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম জমায়েত ঘটে ইজতেমায়। এবারের ইজতেমা শুরায়ী নেজামের (জুবায়েরপন্থি) তত্ত্বাবধানে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। প্রথম ধাপ ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপ ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের থাকার জায়গা আর পশ্চিমে তৈরি হচ্ছে বয়ান মঞ্চ। পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ পাশে শামিয়ানা টানানো হচ্ছে। বয়ান মঞ্চের কাজ এগিয়ে চলছে। আজকের মধ্যেই ময়দান প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা। বয়ান মঞ্চের পশ্চিম পাশে বিদেশি মেহমানদের থাকার ব্যবস্থা, মুসল্লি পারাপারের জন্য তুরাগ নদীর ওপর ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী এবং বিআইডব্লিউটিএ একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। এছাড়াও ইজতেমা ময়দানে সিটি টিভি স্থাপন করেছে র্যাব।
বুধবার বিকেল থেকেই প্রথম ধাপে ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন খিত্তা ও পয়েন্টের জিম্মাদারগণ আসা শুরু করবেন এবং বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারী) সকাল থেকেই দেশি-বিদেশি মেহমান ও সাধারণ মুসল্লিগণ আসা শুরু করবেন।
প্রথম ধাপে (৩১ জানুয়ারী থেকে ২ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর, টঙ্গী, ধামরাই, গাইবান্ধা, মিরপুর, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষিপুর, চাদপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী এবং ঢাকার একাংশসহ মোট ৪১টি জেলার সাথীরা অংশগ্রহণ করবেন।
দ্বিতীয় ধাপে (২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি) যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, নরসিংদী, সাভার, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর,খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নওগাঁ, বান্দরবন এবং ঢাকার একাংশসহ ২২টি জেলার সাথীরা অংশগ্রহণ করবেন।
দুই ধাপে ইজতেমা ইজতেমা করার কারণ হিসেবে হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, টঙ্গী মাঠের ১৬০ একর জায়গায় তাদের অবস্থান করাটা কষ্টকর হয়ে যায়। গত কয়েক বছর শুরায়ী নেজামের অধীনে যে সকল ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে সাথীরা স্থায়ী টয়লেটের ছাদগুলোর উপরে, আশেপাশের ছোট ছোট মাঠগুলোর ভেতরে এবং সড়কে ধুলোবালির ভিতর কষ্ট করে অবস্থান করেছেন। দুই ধাপে ইজতেমা হওয়ার কারণে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
তিনি বলেন, “মাঠ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। দ্বীনের ধারক বাহক হচ্ছেন ওলামায়ে কেরাম। ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ভাইয়েরা উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে থেকেই তাবলীগের মেহনত করতে চান। পুলিশের পক্ষ থেকে যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। সিভিল পোশাকে বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করবেন।”
তিনি জানান, ইজতেমা উপলক্ষে আশপাশের জেলা থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা ময়দানে কাজ করছেন। ১৬০ একর বিশাল ময়দানে শামিয়ানা টানানো, খিত্তায় খিত্তায় বাঁশের খুঁটি, ছাতা, মাইক, টয়লেট পরিষ্কার, বিদ্যুৎ লাইনসহ মুসল্লিদের বিভিন্ন সুবিধার্থে যাবতীয় কাজ করছেন। ৩০/৪০ জন মাদ্রাসা ছাত্র স্বেচ্ছায় ময়দানের কাজ করছেন।
ময়দানের চারপাশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, খুঁটি গাঁড়া, পাটের চট টানানো, মাঠে খুঁটি গাঁড়া, শামিয়ানা টানানোসহ নামাজের জন্য ময়দানে লাইন কাটার কাজ করতে দেখা গেছে। ইজতেমা ময়দানে মূল বয়ান মঞ্চ তৈরির জিম্মাদার মোশাররফ হোসেন জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত বিশ্ব ইজতেমার বয়ান মঞ্চ তৈরির কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি আজকেই মঞ্চ তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবর ইসকান্দার বলেন, “আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার এন এম নাসির উদ্দিন বলেন, “কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে ইজতেমা ময়দান। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য ময়দান ও আশপাশের এলাকায় ২২৮টি সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইজতেমা উপলক্ষে সাত হাজার পুলিশ সদস্য পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিয়োজিত থাকবে। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে র্যাব ও সেনাবাহিনী।”
আপনার মন্তব্য লিখুন