For Advertisement

অর্ধকোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুইটি কার্পেটিং সড়কের কাজ শেষ হওয়ার পর মাস যেতে না যেতেই বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। শিডিউল অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফলের নাজিরপুরের দুটি সড়কে।
সংশ্লিষ্ট ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে বাউফলে ২০২০-২১ অর্থ বছরের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (পাট-ক) নাজিরপুর ইউনিয়নের আবদুল আজিজ মোল্লা বাড়ি হতে নাজিরপুর হাইস্কুল পর্যন্ত ২৬৫ মিটার ও (পাট-খ) নাজিরপুর বাংলা বাজার হতে নাজিরপুর হাইস্কুল ভায়া ডিপটি বাড়ি পর্যন্ত ৫০০ মিটার সড়ক নির্মাণের জন্য মোট ৫০ লাখ ৩৩ হাজার ৮২৪ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়।
মেসার্স মেসার্স পারভীন এন্টারপ্রাইজ নামের পটুয়াখালীর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এই সড়কের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যথাক্রমে ১৪ দিন ও ২৮ দিনের মধ্যে রাস্তা দুটির কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হয়নি। বরং প্রায় ৪ বছর ওই সড়ক দুটির নির্মাণ কাজ ফেলে রাখা হয়। সরকার পরিবর্তনের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করে।
একই বাড়ির রেহেনা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহবধূ বলেন, এই সড়কটির কাজ মোটেও ভালো হয়নি। ঠিকমত সড়কটির ঢালাই কাজ করা হয়নি। পাতলা করে কার্পেটিং করা হয়েছে। পা দিয়ে খোঁচা দিলেই সেই কার্পেটিং উঠে যায়।
নাজিরপুর হাইস্কুল রোডের বাসিন্দা লিটন (৪০) বলেন, সড়কের কাজ চলাকালীন সময় অফিসের কোনো লোকজনকে দেখা যায়নি। ঠিকাদারের লোকজন তাদের মত করে কাজ করেছে। কাজের মালামাল ভালো ছিল না। আমি এই কাজের গুণগত মান নিয়ে সন্তুষ্ট নই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সড়ক দুটির নির্মাণ কাজ খতিয়ে দেখা।
সড়ক দুটির কাজের বর্ণনা অনুযায়ী (স্টিমিট) প্রথমে ৬ ইঞ্চি খোয়া ও বালু দিয়ে ম্যাকাডাম করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এর ফলে সড়কটির ফিটনেস সঠিকভাবে হয়নি। খোয়া ও বালু মিশ্রনের পর ভালোভাবে রোলার করা হয়নি। যেনতেনভাবে রোলার করায় সড়কটিতে উচুনিচু রয়ে গেছে। সড়ক দুটিতে পাথর দিয়ে ১ ইঞ্চি পুরো কার্পেটিং করার কথা। কিন্তু বাস্তবে রয়েছে ভিন্ন চিত্র। চারের এক ভাগ পুরো কার্পেটিং করা হয়েছে, যা খোঁচা লাগলেই উঠে যাচ্ছে। এ সড়কে মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ও ছয় চাকার লড়ে চলাচল করায় সড়ক দুটোর স্থায়িত্ব নিয়ে স্থানীয়রা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সরজমিনে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পারভীন এন্টারপ্রাইজের মালিকের সাথে যোগাযোগ করতে স্টিমিটে উল্লেখিত নাম্বারে ফোন দেয়া হলে এক ভদ্রমহিলা রিসিভ করেন। তিনি বলেন তার নাম পারভিন। তিনিই পারভিন এন্টারপ্রাইজের মালিক। বাউফলের রাস্তার কাজ দুটি তার স্বামী করেছেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তিনি কিছুই জানেন না। তার স্বামী আবদুর রবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সড়কের কাজ করার কথা স্বিকার করে বলেন, কাজ করতে গেলে ১৯-২০ হতে পারে। কিন্তু ১৮-২০ হতে পারে না। নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট অফিসের সাইট ইঞ্জিনিয়ারের থাকার কথা। উনি থাকলে অনিয়ম হওয়ার কথা ছিলো না।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিডিউল অনুযায়ী কাজ হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে দায়ভার সংশ্লিষ্ট অফিসের, আমার না। রাস্তার ঢালাই ৬ ইঞ্চির পরিবর্তে অর্ধেকেরও কম ঢালাই দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।এ বিষয়ে কাজের তদারকি কর্মকর্তা জহির হোসেন বলেন, আমি ওমরা হজে যাচ্ছি। না এসে কিছু বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল কুমার গায়েন বলেন, ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এখনো চূড়ান্ত বিল দেয়া হয়নি। সড়ক দুটি পরিদর্শন করে কোনো অনিয়ম পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সড়কের অনিয়মের দায় কোনোভাবেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না। শীঘ্রই আমি এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হোসেন আলী মীর।
Unauthorized use of news, image, information, etc published by দৈনিক আমাদের পটুয়াখালী is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.
Latest
For Advertisement
Developed by RL IT BD
Comments: