স্বল্পশিক্ষিত বেকার তরুণ–তরুণীদের কর্মমুখী করতে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে স্যাপ–বাংলাদেশ

স্বল্পশিক্ষিত বেকার তরুণ–তরুণীদের কর্মমুখী করে তুলতে পটুয়াখালী অঞ্চলে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘রিকভারি এন্ড এডভান্সমেন্ট অফ ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (রেইজ)’ প্রকল্পের আওতায় (ওস্তাদ–শাগরেদ) মডেল বাস্তবায়ন করছে সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ–বাংলাদেশ (স্যাপ–বাংলাদেশ)। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকে স্যাপ বাংলাদেশের গলাচিপা এরিয়া অফিস চত্বরে ওস্তাদদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে মাস্টার ক্রাফটসপার্সন ওরিয়েন্টেশনের মধ্যে দিয়ে দুইদিনব্যাপী ট্রেনিং কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে। যেখানে দুইটি ব্যাচে ৪০ জন ওস্তাদ প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, স্যাপ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির এড়িয়া ম্যানেজার মো. সাইদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন, প্রকল্প সমন্বয়কারী মো রফিকুল ইসলাম, কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার তাবির আহমেদ ও লাইফ স্কিল এন্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট অফিসার এম এ রাজ্জাক প্রমুখ।

- বিজ্ঞাপন -

প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় তরুণ ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, উদ্যোগ উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ট্রেডের বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ পরিচালনার বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। বিশেষভাবে এই দুইদিন প্রশিক্ষণে পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি, কারিগরি কোর্স ব্যবস্থাপনা, ক্লাস পরিচালনা ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বিষয়ে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, আগামী ছয় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেওয়া আগ্রহী বেকার তরুণ–তরুণীদের সফলভাবে কর্মমুখী দক্ষতাসম্পন্ন করে তোলা, যাতে তারা চাকরি অথবা আত্মকর্মসংস্থানে এগিয়ে যেতে পারে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ওস্তাদ প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মাধ্যমে শাগরেদের সেলাই–দর্জি, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রিশিয়ান, ফ্রিজ–এসি রিপেয়ারিং, বেকিং ও পেষ্ট্রি প্রিপারেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ছয় মাসের বিনামূল্যের কারিগরি প্রশিক্ষণ ক্লাস শুরু হবে। কোর্স শেষে সার্টিফিকেটের পাশাপাশি চাকরি সংস্থান, উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ এবং সহজ শর্তে ঋণ সুবিধাও দেওয়া হবে। অংশগ্রহণকারীদের জন্য রয়েছে যাতায়াত ভাতাও। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য সমাজের পিছিয়ে পড়া স্বল্প আয়ের বেকার তরুণ–তরুণী ও প্রতিবন্ধীদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করে মজুরি ভিত্তিক ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং তাদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা। এ লক্ষ্যেই ‘গুরু–শিষ্য/ওস্তাদ–শাগরেদ’ মডেল চালু করে ৬ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পটুয়াখালী অঞ্চলে ২০০ ওস্তাদ ও ৪০০ তরুণ -তরুণীদের প্রশিক্ষণ আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ নারী যাদেরকে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন বিষয়ে ২৬ টি ট্রেডের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরবর্তী এ কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা হবে।

ওস্তাদ প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সাইমুন রহমান বলেন, এই ট্রেনিং আমাদের কাজকে আরও পেশাদার ও মানসম্পন্ন করবে। আমরা চাই প্রতিটি তরুণ–তরুণী দক্ষ হয়ে নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে শাহিনা আক্তার জানান, এ ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের কাজে নতুন দিক উন্মোচন করবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ফলে আত্মকর্মসংস্থান বাড়বে।

- বিজ্ঞাপন -

প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার তরুণ–তরুণীদের নতুন কর্মসংস্থানের পথ তৈরি হবে। স্যাপ–বাংলাদেশ ও পিকেএসএফ রেইজ প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত যুবসমাজকে দক্ষ করে তুলতে কাজ করছে। পটুয়াখালী অঞ্চলের গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী সদর ও দশমিনা এ ৪টি উপজেলায় প্রকল্পের কাজ চলবে। আমরা আশা করব এ অঞ্চলের সকল বেকার যুবক-যুবতী এ প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে এবং কর্মসংস্থান গড়ে তুলবে। সকলকে দক্ষ হতে হবে কারণ অদক্ষ জনশক্তি যেমন দেশের বোঝা, দক্ষ জনশক্তি তেমন দেশের সম্পদ।

স্থানীয়ভাবে আশা করা হচ্ছে, এই উদ্যোগ পটুয়াখালী অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে এবং বেকার তরুণ–তরুণীদের স্বপ্ন পূরণে নতুন দিগন্ত তৈরি করবে।

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

- Google -

আরও পড়ুন

Back to top button