স্থায়ী প্রকল্প এখনো অনিশ্চিত, ভাঙনের মুখে কুয়াকাটা

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত আজ অস্তিত্ব সংকটে। ক্রমাগত ভাঙনের ফলে সৈকতের ১৮ কিলোমিটারের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে চরম ধ্বংসের চিহ্ন। তিন দশক আগেও সৈকতের প্রস্থ ছিল প্রায় আড়াই কিলোমিটার, বর্তমানে তা কমে এসেছে দুই শত মিটারেরও নিচে। ভাঙনের ফলে সৈকতের পাশের নারকেল, শাল, ঝাউ, কড়াইসহ ম্যানগ্রোভ ও নন-ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্রায় ৭৫ শতাংশ বনাঞ্চল বিলীন হয়ে গেছে।

- বিজ্ঞাপন -

ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, জেলে পল্লীসহ স্থাপনাগুলোর ৮০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এবছরের জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসজুড়ে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তা-ব সৈকতের পরিবেশকে পুরোপুরি এলোমেলো করে দিয়েছে। বর্তমানে সৈকতে জোয়ারের সময় হাঁটার মতো ওয়াকওয়ে পর্যন্ত নেই। ভাঙনরোধে ‘জরুরি প্রতিরক্ষা’ হিসেবে শূন্য পয়েন্ট থেকে দুই দিকে কয়েকশ মিটার এলাকায় জিও টিউব ও জিও ব্যাগ বসানো হলেও তা বছরের পর বছর একই জায়গায় পুনঃস্থাপন করে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। অনেক ব্যাগ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন; পুরনো ব্যাগে শ্যাওলা জমে থাকার কারণে পর্যটকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

বাড়তি উদ্বেগের বিষয় হলো, এবছর সেই জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু উদ্যোগ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়, বরং বেঞ্চ বসানোর কারণে জিও ব্যাগে ছিদ্র হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২৩ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রায় ১২ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ এলাকা রক্ষায় পরিকল্পিত এ প্রকল্পের বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে রয়েছে—৬৮টি গ্রোয়েন নির্মাণ, সি-বিচ এলাকায় দুই কিলোমিটার ৭০০ মিটার স্লিপিং ডিফেন্স নির্মাণ, ট্যুরিজম পার্ক ও ধর্মীয় স্থাপনার আশপাশে ৬০০ মিটার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

স্থানীয় ক্যামেরা পারসন ইলিয়াস জানান, আগে সৈকতের পানির কাছে যেতে ৪০০-৫০০ ফুট হাঁটতে হতো। এখন ১০ ফুটও নেই। বাগান, গাছপালা সব শেষ। পর্যটকরা প্রতিনিয়ত পা পিছলে আহত হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটার প্রধান সমস্যা এখন সৈকতের স্থায়ী প্রতিরক্ষা। এরপর মেরিন ড্রাইভ। এ দুটো ছাড়া কুয়াকাটার উন্নয়ন সম্ভব নয়। ২০০৩ সাল থেকে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় নানা ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি হলেও বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালে একটি প্রকল্পে ২১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘গ্রীন সি ওয়াল’ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল।

পরিবেশবান্ধব, দৃষ্টিনন্দন এ সী ওয়াল দিয়ে পর্যটকরা হাঁটতে পারবে, জোয়ারের ঢেউ রুখতে পানির নিচে বসানো হতো জিও টিউব। কিন্তু সেই প্রকল্পও বাস্তবায়ন হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আছে। কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক বলেন, পর্যটকদের স্বার্থে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান।

- বিজ্ঞাপন -

তবে সৈকত রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। কুয়াকাটার পাঁচ কিলোমিটার তীব্র ভাঙন এলাকা এখন চরম ঝুঁকিতে। এর মধ্যে আড়াই কিলোমিটার এলাকা সবচেয়ে সংকটাপন্ন। স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও সাধারণ মানুষ সবাই আশঙ্কা করছেন, স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশের এই অপরূপ সৌন্দর্যবিষারদ সৈকত চিরতরে সাগরের গর্ভে হারিয়ে যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

- Google -

আরও পড়ুন

Back to top button