সূর্যের আলোয় কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত কুয়াকাটার জেলেরা

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম। উপকূলীয় শুঁটকি পল্লীগুলোতে এখন জেলেদের ব্যস্ত সময় কাটছে কেমিক্যালমুক্ত ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরির কাজে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মচাঞ্চল্যে মুখর শুঁটকি পল্লীগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুঁটকি পল্লীতে চলছে টগবগে কর্মযজ্ঞ। কেউ রোদে মাছ শুকাতে ব্যস্ত, কেউবা আবার নতুন মাচা তৈরি করছেন মাছ শুকানোর জন্য। অনেকেই সাগর থেকে ধরা মাছ আনতে ট্রলার মেরামত ও প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউবা মাছ রাখার জন্য অস্থায়ী ঘর, দোকান বা চাং (মাচা) নির্মাণ করছেন শ্রমিকদের নিয়ে।
সাগর থেকে আহরিত লইট্টা, ছুরি, লাক্ষ্যা, চাপিলা, ছোট চিংড়ি, ছোট পোয়া, রূপচাঁদা ও ফাইস্যাসহ প্রায় ৩৫ প্রজাতির মাছ বাঁশের তৈরি মাচায় বিছিয়ে বা ঝুলিয়ে শুকানো হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে এখান থেকে কোটি কোটি টাকার কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি বিক্রি হয়।
স্থানীয় নারী শ্রমিক আকলিমা বেগম বলেন,
শীতের শুরুতে শুঁটকির কাজ নিয়ে আমাদের দম ফেলারও ফুরসত নেই। একটি পল্লী তৈরি করতেই প্রায় ১৮ দিন লেগে যায়। কেমিক্যাল ছাড়াই পরিচ্ছন্নভাবে শুঁটকি তৈরি করায় এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে।”
স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ী বিল্লাল মৃধা জানান,
আমরা সম্পূর্ণ কেমিক্যাল ও বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি করি। দেশজুড়ে কুয়াকাটার শুঁটকির সুনাম রয়েছে। ক্রেতাদেরও অনুরোধ জানাই—তারা যেন একবার আমাদের পল্লীতে এসে শুঁটকি উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখেন।

- বিজ্ঞাপন -

শুঁটকি মার্কেট সাধারণ সম্পাদক সোহেল মাহমুদ
বলেন,এখন মৌসুমের শুরু, সব কিছুর দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ চিংড়ি বড়ো শুঁটকি ৪০ হাজার টাকা এবং লইট্টা শুঁটকি ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন,নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম চলে। আমরা জেলেদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবারের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার মেট্রিক টন, যা আমরা আশা করছি ছাড়িয়ে যাবে।
কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসিন সাদেক বলেন,কুয়াকাটার শুঁটকি প্রস্তুতকারীরা বেশ অভিজ্ঞ। তাদের একই ছাতার নিচে এনে একটি নির্দিষ্ট স্থানে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে বিশৃঙ্খলভাবে কেউ শুঁটকি শুকাতে না পারে। এ বিষয়ে কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে,দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
কুয়াকাটার শুঁটকি পল্লীগুলোর এই ব্যস্ততা জানিয়ে দিচ্ছে—শীতের আগমনে উপকূলজুড়ে আবারও শুরু হয়েছে জীবিকা ও স্বপ্নের মৌসুম।

আপনার মন্তব্য লিখুন

- Google -

আরও পড়ুন

Back to top button