পবিপ্রবি শিক্ষার্থী আশিকের মৃত্যুর ঘটনায় ডা. শামীম আজাদ ওএসডি: শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি :-

- বিজ্ঞাপন -

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এএসএম শামীম আল আজাদকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে, মহাখালী, ঢাকায় অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী হুসাইন মোহাম্মদ আশিকের অকাল মৃত্যু। ১৪ এপ্রিল (সোমবার) বিকেলে ফুটবল খেলতে গিয়ে পা পিছলে পুকুরে পড়ে যান আশিক। পরে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, জরুরি বিভাগে নেওয়ার পরও প্রায় ৪০ মিনিট পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজ ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তারা স্বাস্থ্যসেবার নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন। আশিকের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোক ও ক্ষোভের ছায়া নামিয়ে আনে।

১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকেলে শিক্ষার্থীরা এক বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে মূল ফটকে এসে বরিশাল-বাউফল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তারা লেবুখালী ইউনিভার্সিটি স্কয়ারের কাছে পায়রা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেন।

- বিজ্ঞাপন -

এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমাদের একজন উদীয়মান শিক্ষার্থীকে আমরা হারিয়েছি চিকিৎসায় চরম অবহেলার কারণে। এটি শুধু তার পরিবার নয়, আমাদের পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকেই গভীরভাবে আঘাত করেছে। আমরা আশিকের পরিবারের পাশে আছি।”

পরদিন ১৬ এপ্রিল (বুধবার) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ডা. শামীম আজাদকে ওএসডি করার ঘোষণা দেয়। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত আট সদস্যের তদন্ত কমিটির কাজ চলমান রয়েছে, তবে রিপোর্ট এখনো প্রকাশ পায়নি।

ডা. শামীম আজাদকে ওএসডি করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকে একে যথাযথ বিচার মনে করছেন না। আইন অনুষদের শিক্ষার্থী মোঃ খোকন হোসেন বলেন, “ওএসডি কোনো শাস্তি নয়। ওনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত।” কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মারসিফুল আলম রিমন বলেন, “শুধু পদায়ন বদল নয়, দরকার সঠিক বিচার।”

শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শুধুমাত্র ওএসডি নয়—অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্থায়ী ও দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে চিকিৎসায় গাফিলতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

- Google -

আরও পড়ুন

Back to top button