For Advertisement
পবিপ্রবি’র ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি’র উদ্যোগে কুয়াকাটা সৈকতে বীচ ক্লিনিং কর্মসূচি

সবুজে মোড়ানো সুন্দরবন, নীলাভ কুয়াকাটা, আর দিগন্তজোড়া বঙ্গোপসাগরের বুকে দাঁড়িয়ে যখন আমরা সভ্যতার নামে প্রকৃতিকে ক্লান্ত করে তুলছি, তখন কিছু পদধ্বনি শোনা যায়—নতুন প্রজন্মের, যারা প্রকৃতিকে দেখে শুধু নয়, বুঝতেও চায়। তেমনই এক নিঃশব্দ কিন্তু গভীর বার্তা ছিল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)-এর ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি’র (IMFO) উদ্যোগে আয়োজিত “বীচ ক্লিনিং প্রোগ্রাম”।
১৭ মে (শনিবার) বিকেল ৩টায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের বিশাল প্রান্তরে যে ব্যতিক্রমী পরিবেশ-অভিযান শুরু হয়, তার মূল আয়োজক ছিল IMFO এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ। এ কর্মসূচি যেন হয়ে উঠেছিল এক নিঃশব্দ সমাবেশ—প্লাস্টিক, পলিথিন, মাছ ধরার পরিত্যক্ত জাল, কঠিন বর্জ্য—সব তুলে নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা। বালুর উপর জেগে ওঠা সেই দৃশ্য যেন ছিল এক নীরব বিপ্লব, যেখানে নেতৃত্বে ছিলেন পরিবেশপ্রেমী তরুণেরা।
‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি’—পবিপ্রবির একটি অগ্রণী গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যাদের কাজ কেবল পাঠদান নয়, বরং দেশের সমুদ্রসম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় নিরবিচারে গবেষণা ও সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ। সমুদ্রবিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানবিক দায়বদ্ধতার অনন্য মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এই ইনস্টিটিউটটি। কুয়াকাটা সৈকতে এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আবারও দেখিয়ে দিল—তারা শুধু সমুদ্র অধ্যয়ন করে না, সমুদ্রকে ভালোওবাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বীচ ক্লিনিং প্রোগ্রামের উদ্বোধনকালে বলেন,“সমুদ্রের ডাক শুধু প্রকৃতির নয়, এটি একটি নৈতিক আহ্বান—সংরক্ষণ ও দায়িত্বের। ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি তাদের যে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা পেরিয়ে দেশের উপকূলীয় ভাবনায় আলোকপাত করবে। শিক্ষার্থীদের হাতে যখন পরিবেশ রক্ষার ঝুড়ি, তখন আমরা নিশ্চিত হতে পারি—ভবিষ্যৎ নিরাপদ।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (UGC) সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. মাসুমা হাবিব বলেন,
“শিক্ষা শুধু শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সংলাপে, সমাজের সেবায় প্রকাশ পায় তার পূর্ণতা। পবিপ্রবির ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি’ এই শিক্ষার ব্যঞ্জনা বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। তাদের এই আয়োজন নিঃসন্দেহে দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উদাহরণস্বরূপ।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন,
“সমুদ্র আমাদের জাতিগত সম্পদ, জীবনের অংশ। এই সমুদ্রকে রক্ষা করা মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা। IMFO ও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সম্মিলিত প্রয়াসে এই কর্মসূচি এক ব্যতিক্রমী নজির। কুয়াকাটা কেবল একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি একটি প্রাণপ্রবাহ—যেখানে প্রকৃতি, জীবন ও জীববৈচিত্র্য একত্রে বেঁচে থাকে। এই সমুদ্রকে রক্ষা করা মানে আমাদের জাতিগত পরিচয়কে সংরক্ষণ করা। আমাদের শিক্ষার্থীরা এই বার্তা হৃদয়ে ধারণ করছে—এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর মোঃ আবদুল লতিফ, পোস্ট গ্রাজুয়েট স্ট্যাডিজের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, আরটিসি’র পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ মামুন-উর-রশিদ, রেজিস্ট্রার ও আইকিউএসি পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন, ইএসডিএম অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ মুহসিন হোসেন খান, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ সাজেদুল হক, মৎস্য বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, ইনোভেশন সেন্টারের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আবু ইউসুফসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন এ কর্মসূচিতে।
কেউ বালুর নিচ থেকে পলিথিন তুলে নিচ্ছেন, কেউ জাল সংগ্রহ করছেন। কেউ আবার শিশুদের প্লাস্টিক খেলনা সযত্নে আলাদা করছেন। যেন প্রতিটি হাত একেকটি প্রতিশ্রুতি—“আমরা দায় নিচ্ছি আমাদের সমুদ্রের, আমাদের পৃথিবীর।”
কর্মসূচির শেষে আয়োজিত সচেতনতামূলক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্লাস্টিক ও কঠিন বর্জ্য আজ সমুদ্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যেমন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি সমুদ্রের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বক্তারা এ সংকট মোকাবেলায় নীতিনির্ধারকদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, জনগণের সচেতনতা এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার ওপর জোর দেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিপূর্বেও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নানা কর্মসূচি পালন করেছে। তবে ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি’র এ আয়োজন যেন ছিল প্রকৃতির সঙ্গে এক প্রেমপূর্ণ মৈত্রীচুক্তি। এখানে কোনো স্লোগান ছিল না, ছিল দায়িত্বের প্রতিধ্বনি। প্রকৃতির প্রতি যে প্রেম গভীর, তার সুরক্ষা নিয়েই জাগে মানবিক বোধ। পবিপ্রবির তরুণরা তা প্রমাণ করল—সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই নিরব, কিন্তু প্রতিনিয়ত আন্দোলিত। আর IMFO হয়ে উঠল সেই নেতৃত্বের মশাল, যারা সমুদ্রকে দেখে শুধু দিগন্ত নয়, দায়িত্বও।
For Advertisement
Unauthorized use of news, image, information, etc published by দৈনিক আমাদের পটুয়াখালী is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.
Comments: