পবিপ্রবিতে ছাত্রদলের উদ্যোগে ক্যাফেটেরিয়ায় পর্দানশীন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘পর্দা কর্নার’ উদ্বোধন

ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক শালীনতা ও নারীর মর্যাদা রক্ষার উদাহরণ হিসেবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় উদ্বোধন করা হয়েছে ‘পর্দা কর্নার’। পর্দানশীল নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই ‘পর্দা কর্নার’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান। এছাড়াও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন, লাইব্রেরিয়ান অধ্যাপক ড. মোঃ হাবিবুর রহমান, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুজাহাঙ্গীর কবির সরকার, প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোঃ জামাল হোসেন, পরিচালক (শরীর চর্চা) ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম টিটো, ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুবকর সিদ্দিক, সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন এবং ছাত্র শিবির পবিপ্রবি শাখার সভাপতি জান্নাতীন নাঈম জীবনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রাতুল ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা জনি জানান, নারী শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা বিবেচনা করেই তারা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
শিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার বলেন,“আমাদের জন্য আলাদা পর্দা কর্নার চালুর উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আগে ছেলেদের ভিড়ে ক্যাফেটেরিয়ায় ঢোকা বা খাওয়া অস্বস্তিকর ছিল। এখন আমরা নির্বিঘ্নে ও আরামদায়কভাবে বসে খাবার গ্রহণ করতে পারব, একইসঙ্গে আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধও রক্ষা পাবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি করা আমাদের প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সেই প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নেবে।”
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন, “একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় তখনই প্রকৃত অর্থে উন্নত হয়, যখন সেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সম্মান জানানো হয়। এই ‘পর্দা কর্নার’ তারই প্রতীক। এটি নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতার এক মানবিক উদাহরণ।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নয়—এটি নৈতিকতা, মানবিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের এক আলোকিত অঙ্গন। আমরা বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত শিক্ষা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তার চরিত্র, শালীনতা ও সংস্কৃতির মধ্যে আলোর সংযোগ ঘটে। ইসলামে নারীর মর্যাদা সর্বোচ্চ। নারী আমাদের সমাজের অর্ধাংশ, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মানে গোটা মানবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন। আজ যে ‘পর্দা কর্নার’ উদ্বোধন হলো, এটি সেই সম্মান ও মর্যাদারই বাস্তব প্রতিফলন। এখন আমাদের পর্দানশীল নারী শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে, আরামদায়ক ও নিরাপদ পরিবেশে খাবার গ্রহণ করতে পারবে। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই পবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যদের, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এমন একটি সময়োপযোগী, মানবিক ও ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি ধর্মীয় চেতনা ও আধুনিক শিক্ষার এক সুন্দর সেতুবন্ধন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াসহ অন্যান্য সুবিধার মানোন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী দিনে পবিপ্রবি হবে এমন একটি শিক্ষাঙ্গন, যেখানে নৈতিকতা, পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য মিলেমিশে থাকবে এক অবিচ্ছেদ্য সুরে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দু’দশক দশক পর এমন মানবিক উদ্যোগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রশংসার ঢেউ। অনেকেই বলছেন—এটি কেবল একটি ‘কর্নার’ নয়, বরং এটি নৈতিকতা, শালীনতা ও বিশ্বাসের সমন্বয়ে গঠিত এক নতুন সামাজিক সংস্কৃতির সূচনা। ইসলামের শালীনতা, নারীর মর্যাদা ও আধুনিক শিক্ষার সংমিশ্রণে পবিপ্রবির এই উদ্যোগ যেন হয়ে ওঠে অন্যসব শিক্ষাঙ্গনের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর—এমন প্রত্যাশা সকলের।
আপনার মন্তব্য লিখুন