ডিসেম্বরের পর অবৈধ ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেবে বিটিআরসি

সরকারি সূত্রের ভাষ্য — অনলাইন জুয়া, ফ্রড, এবং অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ ও অনিবন্ধিত হ্যান্ডসেট। এসব চোরাই বা রিফারবিশড (পুরনো মডেলের নতুন বলে বিক্রি করা) ফোনের মাধ্যমে আইডি-ফ্রড, ভুয়া নম্বর ও গোপনীয়তা ভঙ্গের মতো অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা হলো ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (NEIR/এনআইআর) সক্রিয় করে অবৈধ সেটগুলোর নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস কেটে দেওয়া।
প্রাথমিক ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরের পরে যে সব সেট দেশেই আনবে—তাঁদের IMEI/আইডেন্টিটি যাচাই না থাকলে তা মোবাইল অপারেটরের নেটে সচল হবে না। পরবর্তী ধাপে ধাপে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা এবং নকল/ক্লোনকৃত সেটগুলোকেও শনাক্ত করে নেটওয়ার্কে অচল করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সরকারি রাজস্ব রক্ষাসহ প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনে সহায়তা মিলবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
বিটিআরসির উদ্বেগ ও বাস্তবতা
নিয়ন্ত্রকরা বলছেন, অনিবন্ধিত ফোনগুলো শুধু ব্যক্তিগত তথ্য বিপন্ন করছে না — এগুলো ব্যবহার করে অপরাধী সহজেই ট্র্যাক এড়াতে পারছে, ফলে নির্দিষ্ট আইপি বা লোকেশন পাওয়া যাচ্ছে না; ভুয়া নাম ও নম্বর ব্যবহার করে অপরাধগুলো কমপ্লেক্স হচ্ছে। NEIR চালু হলে প্রতিটি ডিভাইসের ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরকে নথিভুক্ত করে নির্দিষ্ট ন্যাশনাল আইডি ও সিম ট্রিপল (ট্রিপল-রেজিস্ট্রি) পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যাতে চোরাই বা অনিবন্ধিত সেট নেটওয়ার্কে সংযোগ করতে না পারে।
স্থানীয় মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ও ব্যবহারকারীর সমস্যাও চিহ্নিত
স্থানীয় হ্যান্ডসেট নির্মাতারা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন—বাজারে নকল ও রিফারবিশ হ্যান্ডসেটের প্রবেশ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অনেক ক্রেতাই সাশ্রয়ে হাই-এন্ড সেট ব্যবহারের লোভে পুরনো বা রিফারবিশ সেট কিনে ফেলছেন; ফলে সরকারের ট্যাক্স-রাজস্ব ক্ষতিও হচ্ছে। সরকারি হিসাব থেকে প্রতিদিন লাগামের বাইরে প্রবেশকারী অবৈধ সেটের কারণে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পতন হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে NEIR ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
চ্যান্সেলেশন ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
আগের সময়ে NEIR বাস্তবায়নে কয়েকবার দেরি ও মানবিক/প্রযুক্তিগত বিভিন্ন উদ্বেগ দেখা গেছে; তাই ধাপে ধাপে সুরক্ষিত ও টেকসই কৌশল নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, ডিসেম্বরের আগে কেনা ফোনগুলোর ক্ষেত্রে এককালীন ডিএকটিভেট করার বদলে যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে সাধারণ গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তি কমে। প্রশাসন বলেছে—কিছু ক্ষেত্রে একটি IMEI নম্বরে শতাধিক সেট রেজিস্টার করা আছে; সেক্ষেত্রে ভুল কিংবা প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের ক্ষতিটা মিনিমাইজ করতে সময় লাগবে।
প্রয়োজনে গ্রাহকদের করণীয়
বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটররা ক্রেতাদেরকে অনুরোধ করছেন—ফোন কেনার আগে তার IMEI নম্বর যাচাই করবেন এবং রেজিস্টারড কিনা নিশ্চিত করবেন। হারিয়ে যাওয়া সেট ব্লক করতে এবং সুরক্ষার জন্য নিজের জাতীয় পরিচয় ও সিমের সঙ্গে সেটের ত্রিপল মিল নিশ্চিত রাখা বেশি দরকার হবে। এছাড়া, সন্দেহজনকভাবে কম দামে বিক্রি হওয়া হাই-এন্ড ফোনে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার লক্ষ্য
বিটিআরসি বলেছে—NEIR কার্যকর হলে অনিবন্ধিত, চোরাই ও ক্লোনকৃত ডিভাইসের প্রবেশ রুদ্ধ হবে; এতে অপরাধ দমন, ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা ও সরকারের রাজস্ব সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হাতে থাকা প্রযুক্তি ও অপারেটরদের সহযোগিতায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মধ্যে প্রথম ধাপ কার্যকর করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে—এরই মধ্যে সরকারি ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে বসবার ও টেকনিক্যাল বিষয় সমাধানের কাজ চলছে।




আপনার মন্তব্য লিখুন