ঘুষের টাকার জন্য অবরুদ্ধ ভূমি কর্মকর্তা

ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা কাজী মো. জাহিদুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ভুক্তভোগীরা। রোববার দুপুর ১ টার দিকে সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ ঘটনা ঘটে। এসময় প্রায় ১৫-২০ জন ভুক্তভোগীর তোপের মুখে অন্তত ৩০ মিনিট অবরুদ্ধ থাকেন ওই কর্মকর্তা। পরে উপজেলা সার্ভেয়ার মো. আনসার উদ্দীন ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাকির হোসাইন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব দাশ পুরকায়স্থের বরাদ দিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। বিষয়টি দ্রæততম সময়ের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের লিখিত অভিযোগ রাখা হয়।

- বিজ্ঞাপন -

জানা গেছে, ভেকু গাড়ি আটক, খাস জমি বন্দোবস্ত, নিজস্ব দালাল চক্রের মাধ্যমে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর, হোল্ডিং অনুমোদন, মিউটেশন, সরকারি খাল-পুকুর খাস আদায় নামে প্রতারণা ও মামলার প্রতিবেদনের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন। টাকা না দিলে করা হয় হয়রানি। দালালদের মাধ্যমে দেয়া হয় হুমকি-ধমকি। অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা লেনদেন করেছেন। তবে ঘুষ নিয়েও কাজ না করে নানান অযুহাতে আড়ালে থেকেছেন। সম্প্রতি ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা কাজী মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীত সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরেই গুনজন ওঠে তার বদলী নিয়ে। ঘুষ দিয়েও সেবা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে টাকা ফেরত নিতে ভূমি অফিসে আসেন তারা।

সরকারি কলেজের অফিস সহায়ক মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, মামলার তদন্ত জাহিদুল তহশিলদারের কাছে আসে। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। দার-দেনা করে তাকে ১৫ হাজার টাকা দেই।

ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের মিজানুর বলেন, জমির কেস নম্বর বাদ দিয়ে সরকারি খাস খতিয়ানে গেছে বলে জাহিদ তহশিলদার তার দালাল মানিক মোল্লার মাধ্যমে আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। অনেক হয়রানির পরে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছি। তহশিলদার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। একই গ্রামের গোলাম রাব্বি বলেন, আমি ভাড়া ভেকু চালিয়েছি। সেই সময় হয়রানি করেছে। নতুন ভেকু কেনার পরে জাহিদুল তহশিলদার সাথে দেখা করলে তিনি বলেন, ১ লাখ টাকা দিতে হবে। আমি ইনস্যুরেন্স করতে চাইলে সে বলেন আমরাই ইনস্যুরেন্স। তুমি ১ লাখ টাকা দাও। পরে অনুরোধ করলে ৫০ হাজার টাকা নেয়। আর দুইটি খাস জমির বন্দোবস্ত জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি।

ভেকু গাড়ির মহজন সোহরাব মৃধা বলেন, ইউএনও স্যারের কথা বলে আমার ভেকু গাড়ির চাবি নিয়ে গেছে। পরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাইলে ৫০ হাজার টাকা দেই। সম্পূর্ণ টাকা না দিলে দেড় মাস পর্যন্ত চাবি আটকে রাখে। আজকে ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে আসায় টাকা না দিয়ে চাবি ফেরত দিয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -

অবরুদ্ধের ব্যাপারে ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাকির হোসাইন বলেন, অফিস চলাকালীন সময়ে অনেক লোক জড়ো হয়। আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। প্রত্যেকের অভিযোগ হচ্ছে, ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের সাথে লেনদেন রয়েছে। তাদের অভিযোগের বিষয়ে এসিল্যান্ড স্যারের সাথে কথা বলেছি, স্যার মিটিংয়ে আছেন। এসে সকলের অভিযোগ শুনবেন।

উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. আনসার উদ্দীন বলেন, বিভিন্ন সময়ে লোকজনের থেকে টাকা নিয়ে বলে জেনেছি। এ বিষয়টি এসিল্যান্ড স্যারের সাথে কথা বলেছি, স্যার জেলায় মিটিংয়ে আছে। স্যার আগামীকাল আসলে পদক্ষেপ নিবে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, জেলায় মিটিংয়ে আছি। বিষয়টি শুনেছি, সবার লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখবো।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ উল আলম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। জেলা প্রশাসক স্যার সাথে কথা বলবো।

আপনার মন্তব্য লিখুন

- Google -

আরও পড়ুন

Back to top button