কীটনাশক নির্ভর কৃষি : ভয়াবহ এক সংকট

বাংলাদেশের কৃষি আজ এক অদ্ভুত সংকটে দাঁড়িয়ে। উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় আমরা এমন এক ফাঁদে আটকে গেছি, যেখান থেকে বের হতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে। সেই ফাঁদের নাম—অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহার।
বিষের ছায়ায় কৃষি ও স্বাস্থ্য
আমরা প্রতিদিন বাজার থেকে শাকসবজি ও ফলমূল কিনে থাকি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছি, এগুলোতে কতটা কীটনাশকের অবশিষ্ট থাকতে পারে? সত্যি বলতে এখন প্রায় প্রতিটি কৃষিই কীটনাশক নির্ভর। নতুন কীটের আক্রমণ, রোগবালাই, প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন—সব মিলিয়ে কৃষক অনেক সময় অন্য কোনো পথ খুঁজে পান না।
অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে—
জমির উর্বরতা ধ্বংস হচ্ছে
মৌমাছি, মাছি, পাখি হারিয়ে যাচ্ছে
আমাদের শরীরে ঢুকছে বিষ, বাড়ছে ক্যান্সার, কিডনি রোগ, স্নায়ুজনিত অসুখ
স্প্রে করা কৃষকের মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের ক্ষত
মাটির উপকারী জীবাণু ও কেঁচো মারা যাচ্ছে, জমি শক্ত হয়ে পড়ছে
সবচেয়ে ভয়ংকর হলো—ফসল কাটার আগে যদি নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা না করা হয়, বিষ সরাসরি খাবারের ভেতর থেকে যায়। আমরা অজান্তেই সেই বিষ খেয়ে ফেলি।
উত্তরণের পথ কোথায়?
প্রথমেই দরকার বিকল্প ভাবনা। প্রতিটি সমস্যার সমাধান কীটনাশক নয়।
১. জৈব ও প্রাকৃতিক উপায়
নিম, ধুতরা বা অন্যান্য উদ্ভিদজাত বায়োপেস্টিসাইড
ফেরোমন ফাঁদ, আলো ফাঁদ
মাকড়সা, ফড়িং, গুবরে পোকার মতো প্রাকৃতিক শত্রু সংরক্ষণ
২. সঠিক পরামর্শ ও নিয়ন্ত্রণ
কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক ক্রয় ও প্রয়োগ
মাত্রা মেনে ব্যবহার
৩. ব্যবসায়ী প্রশিক্ষণ
কীটনাশক ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি/বেসরকারি ট্রেনিং
৬ মাসের কোর্স সম্পন্ন না করলে লাইসেন্স নয়
কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করা ব্যক্তিদের লাইসেন্সে অগ্রাধিকার
৪. জৈব কৃষির প্রসার
প্রতিটি কীটনাশক দোকানে “জৈব বালাইনাশক কর্ণার”
প্রতিটি ইউনিয়নে জৈব কৃষি বাজার
কৃষক ন্যায্য দাম পাবেন, ভোক্তা পাবেন নির্ভেজাল খাদ্য
৫. সচেতনতা সৃষ্টি
কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ
সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও জৈব কৃষি উৎসাহিত করা
শেষ কথা
আমরা যদি এখনই পথ না বদলাই, তবে সুস্থ জীবন শুধু বইয়ের পাতায় পড়ে যেতে হবে। তবে চাইলে এখনো সময় আছে। প্রকৃতি-ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নিরাপদ খাবার যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি বাঁচবে মাটির উর্বরতা ও পরিবেশ।
আমাদের মনে রাখতে হবে—
খাদ্য শুধু পেট ভরানোর উপায় নয়, খাদ্যই জীবন। আর বিষমিশ্রিত খাদ্য কখনো জীবন নয়, বরং মৃত্যুর পথে ধাবিত হওয়ার নামান্তর।
মো: আসিফুল হক তুষার
ডিপ্লোমা (কৃষি), বিএজিইডি (কৃষি)
আপনার মন্তব্য লিখুন