ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে বিএনপির আপত্তি: জামায়াত-এনসিপির ভাবনাই প্রতিফলিত

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে বিএনপি বলছে, ওই সুপারিশে দলটির প্রস্তাবনা উপেক্ষা করা হয়েছে, বরং জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র মতামতের প্রতিফলনই সেখানে স্পষ্ট।

- বিজ্ঞাপন -

দলটির অভিযোগ, বিএনপি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হয়েও তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ কমিশনের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি—যা প্রতিশ্রুতিবিরোধী। এ ঘটনায় বিএনপি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ঐদিন দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশমালা জমা দেওয়ার পরই রাত ১০টা থেকে বৈঠক শুরু হয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। পরে তা মুলতুবি রেখে বুধবার পুনরায় বৈঠক বসে স্থায়ী কমিটি।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, নবনির্বাচিত সংসদ প্রথম ২৭০ দিন ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো ওই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন না হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।

- বিজ্ঞাপন -

বিএনপি নেতারা এই বিধানকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) ১৯৭০ এবং আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, ঐকমত্য কমিশন সেই ধাঁচে জনগণের ওপর মত চাপিয়ে দিতে চাইছে।

নেতারা বলেন, “এটি জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এতে ঐকমত্য নয়, অনৈক্য তৈরি হয়েছে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “২৫টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও কমিশনের সুপারিশ সেই সনদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মনে হচ্ছে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য।”

অন্য সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “রেফারি গোল দেবে—এমনটা আগে শুনিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কমিশন, সরকার ও আরও কয়েকটি দল একই পক্ষ।”

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। অথচ আমাদের প্রস্তাব রাখা হয়নি; বরং যেগুলোর বিরোধিতা করেছি, সেগুলোকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন এখন কার্যত ‘অনৈক্য কমিশনে’ পরিণত হয়েছে।”

বিএনপি মনে করছে, ঐকমত্য কমিশন, অন্তর্বর্তী সরকার ও আরও কিছু রাজনৈতিক দল একই পক্ষ হয়ে কাজ করছে। দলটির মতে, কমিশনের এই সুপারিশ ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন পেছানোর একটি কৌশল হতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

- Google -

আরও পড়ুন

Back to top button