এবার পটুয়াখালী নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ!

পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নীলুফার শিরিনের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন একই আদালতের সাবেক পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) আইনজীবী রুহুল আমিন। একই সাথে আদালতের পেশকার আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) তিনি এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে রুহুল আমিন দাবি করেন, পটুয়াখালী নারী ও শিশু আদালত একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে বিচারক নীলুফার শিরিন, আদালতের পেশকার আব্দুর রাজ্জাক, সহকারী পিপি মাসুদ হোসেন মৃধা এবং পেশকারের ছোট ভাই আইনজীবী আরিফ হোসেন জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আদালতে নিয়মিত ঘুষ লেনদেন হয় বলে তিনি দাবি করেন।
রুহুল আমিনের ভাষ্য অনুযায়ী, বিচারক গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে অনুপস্থিত থেকে বাসায় বসেই জামিন ও খালাস সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অন্যদিকে পেশকার আব্দুর রাজ্জাক অধিকাংশ মামলায় হস্তক্ষেপ করে তার ভাই আইনজীবী আরিফ হোসেনকে দিয়ে পরিচালনা করান। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ জানালে সিন্ডিকেট মহল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁকে চাপে রাখতে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ মো. সালাহউদ্দীনের নেতৃত্বে তাঁর চেম্বারে ভাঙচুর ও হামলা চালানো হয়। পরে এজলাস চলাকালীন সহকারী পিপি মাসুদ হোসেন মৃধার নেতৃত্বে তাঁকে লাঞ্ছিত করে জোরপূর্বক সাধারণ সম্পাদকের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে সদর, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া ও মহিপুর থানার মামলাগুলো তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়।
এছাড়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে চাইলে পুনরায় তাঁর ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন রুহুল আমিন। এতে তিনি আহত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি মামলা হলেও প্রতিপক্ষ আইনজীবীরা তাঁকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগকারীর দাবি।
প্রসঙ্গত, গত ২০ আগস্ট বিচারক নীলুফার শিরিন পিপি রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ আনেন। তাঁর অভিযোগে বলা হয়, ওই দিন সকালে রুহুল আমিনের একজন লোক তাঁর বাসায় গিয়ে একটি লাল ব্যাগ দিয়ে আসেন। ব্যাগে মামলার নথিপত্র ছাড়াও ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিল পাওয়া যায়।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৪ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয় রুহুল আমিনের পিপি নিয়োগ বাতিল করে। তারও একদিন আগে ২৩ আগস্ট ঢাকা বার কাউন্সিল তাঁর আইনজীবী সনদ স্থগিত করে। একইসাথে জেলা আইনজীবী সমিতি ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর সদস্যপদ থেকেও তাঁকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগে রুহুল আমিন পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন