শুক্রবার ২৩ মে, ২০২৫

For Advertisement

ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে আবারো স্থাপিত হবে যুদ্ধ বিমানটি

২১ মার্চ, ২০২৫ ১১:২২:৩৯

 

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ‘ইউনিভার্সিটি’ চত্বরে স্থাপিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) দিকনির্দেশক স্মারক যুদ্ধবিমানটি পুনরায় স্থাপিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর বিমান বাহিনী সদর দপ্তর কতৃক প্রেরিত পত্রের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো: ইকতিয়ার উদ্দিন।

বরিশাল-কুয়াকাটা এবং বরিশাল- বাউফল এই দুই সড়কের সংযোগস্থলে থেকে এফ-৬ মডেলের ‘যুদ্ধবিমান’ নির্দেশনা দেবে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের’ দিকে। এটি হবে এখন বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের মূল আকর্ষণ।

পবিপ্রবি’র মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম গত বছরে উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই বিমানটি বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ‘ইউনিভার্সিটি’ চত্বরে পুনরায় স্থাপনের জন্য সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কতৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন।

উপাচার্যের অনুরোধে এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় গতকাল বিমানবাহিনী কতৃপক্ষ একটি পত্রের মাধ্যমে অকেজো (Phased Out) F6 বিমান (ক্রমিক নম্বর-৪১২৫) পুনরায় স্থাপনের সিদ্ধান্তর খবর জানান। এ খবরটি ক্যাম্পাসে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে পৌছালে তারা সবাই আনন্দে আপ্লুত হন এবং বিমানবাহিনী কতৃপক্ষ সহ সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

২০০৩ সালে উক্ত অকেজো (Phased Out) F6 বিমানটি বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দেয় বিমান বাহিনী। পরে সেটি বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক এলাকায় দিকনির্দেশক হিসেবে স্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য ২০২১ সালের ৬ মার্চ (শনিবার) সন্ধ্যায় লেবুখালী নদীর ওপরে পায়রা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে নিয়োজিত মাটি কাটার যন্ত্র (এক্সক্যাভেটর) দিয়ে পায়রা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা এটি ভেঙে ফেলেছিল। তখন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয়রা।

পটুয়াখালীর তৎকালীন ‘জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছিলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মনুমেন্টটি মেরামত করে আবার স্থাপন করা যায় কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।’
তখন লেবুখালী সেতুর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিমও বলেছিলেন পায়রা সেতুর পটুয়াখালী প্রান্তের সড়কের এপ্রোচ নির্মাণ কাজ করার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা পরে ঠিক করা হবে। কিন্ত পরে তারাকেহ তাদের কথা রাখেননি

তথন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় পবিপ্রবি’র হ্রদয়ের মনিকোঠায় থাকা এ মনুমেন্ট ভাঙা নিয়ে সরাসরি প্রতিবাদ করতে না পারলেও প্রতিবাদ করেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তখন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেছিল নির্দেশক স্তম্ভটিতে থাকা স্মারক যুদ্ধ বিমানটি ভেঙে না ফেলেও সুরক্ষিত অবস্থায় রাখতে পারতো। এটি তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষের ব্যর্থতা ও সেতু কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে যুদ্ধবিমানটিকে ভেঙে ফেলা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘দেশের অধিকাংশ মানুষ এ ধরনের স্থাপনা চোখে দেখে বিমান ভ্রমণের স্বাদ মেটান। বিশেষ করে এই যুদ্ধবিমানটি দেখে শিশু মনে বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হয়। দৃষ্টিনন্দন পটুয়াখালী ইউনিভার্সিটি নির্দেশকের উপরে থাকা যুদ্ধবিমানটি ভেঙে ফেলার নিন্দা প্রকাশের ভাষা নেই।’

২০২১ সালের ৭ মার্চ (রোববার) দুপুরে পবিপ্রবির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, লেবুখালী সেনানিবাসের জিওসি এবং বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন জিএম আলী হায়দার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন। তথন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, এটি সংস্কার করে আবার স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিমান বাহিনীর তিন সদস্যের একটি দল কাজ শুরু করেছে।

জানাগেছে স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের আকাশসীমার সুরক্ষায় এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি কেনা হয়েছিল। যুদ্ধবিমানটি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। এ মডেলের বিমানের ইঞ্জিন সাধারণত ভেতরেই থাকে। তবে এটিতে ইঞ্জিন নেই। এছাড়া পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিমানটি মডেল হিসেবে রূপ দেওয়া হয়। পরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক নির্দেশক ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নিজ উদ্যোগে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে ২০০৩ সালে স্থাপন করা হয়।

এটিকে আবারও বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে ইউনিভার্সিটি স্কয়ারের যথাস্থানে স্পাপনকরার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই যুদ্ধবিমানটি শুধু একটি স্মারক নয়, এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের অংশ। এটি পুনরায় স্থাপিত হলে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ স্থানীয়দের আবেগ ও গর্বের প্রতিফলন ঘটবে। আমরা পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বিমান বাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এবং বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ, যাদের প্রচেষ্টায় এটি আবারও আমাদের গৌরবময় ক্যাম্পাসের অংশ হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে এটি শুধু পথনির্দেশক নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম ও ইতিহাসের প্রতি অনুরাগ জাগ্রত করার প্রতীক হয়ে থাকবে।” বিমানটিকে আবারও স্পাপনকরার খবরে ক্যাম্পাসের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।

Unauthorized use of news, image, information, etc published by দৈনিক আমাদের পটুয়াখালী is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.


Comments:

Latest

For Advertisement

প্রকাশক: মাহমুদ হোসাইন
সম্পাদক : সিকদার জোবায়ের হোসেন।   স্বত্বাধিকারী : পটুয়াখালী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।    

Developed by RL IT BD